মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে বোমা বিস্ফোরণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শান্তিরক্ষী শরীফুল ইসলামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার বেড়া খারুয়া গ্রামে। তার মৃত্যুর খবরে পরিবারসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বুধবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকার বেড়াখারুয়ায় শরীফুলের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ছেলে শোকে শরীফুলের মা পাঞ্জু আরা বেগম নির্বাক হয়ে পড়েছেন। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা লেবু শেখ। শরীফুলের স্ত্রী বিলাপ করছেন।
অকালে সন্তান হারানোর শোক যেন কোনোভাবেই সইতে পারছেন না মা পাঞ্জু আরা। মাঝে মাঝে অস্পষ্ট কণ্ঠে শুধু বলছেন- ‘তোমরা আমার শরীফুলকে আইনা দাও, এইভাবে সে চইলা যাইতে পারে না।’
শরীফুলের মৃত্যুর খবরে কাঁদতে কাঁদতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও। সবার আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। কাঁদছেন প্রতিবেশীরাও। এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। সবাই বলছেন, ‘কী এমন তাড়া ছিল শরীফুলের।’
স্বজনরা জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী শরীফুল। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন তিনি। মিশনে যাওয়ার ছয় মাস আগে বিয়ে করেন। নতুন বউকে রেখেই পাড়ি জমান প্রবাসে। কে জানতো এই বিদায়ই শেষ বিদায়। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শরীফুল সবার বড়। মিশন থেকে ফিরে একমাত্র বোন লাকি খাতুনের বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল।
শরীফুলের স্ত্রী সালমা খাতুন চিৎকার করে বলছেন, ‘আমার জীবনের সব শেষ হয়ে গেছে। তোমরা আমার স্বামীকে ফিরিয়ে এনে দাও। আমার জীবন আজ বড় অন্ধকার। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই। বিয়ের পরেই পাড়ি জমালো প্রবাসে। কে জানতো এই বিদায়ই তার শেষ বিদায়।’
শরীফুলের ছোট ভাই কাউছার হোসেন বলেন, ১৫ দিন আগেও আমার ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলেন- আর দুই মাস পর চলে আসবেন। দেশে এসে বাড়িঘরের কাজ করাবেন। ছোট বোনকে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেবেন। আমার ভাইয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো না। এখন আমার ভাই নেই, আমাদের সংসার চলবে কী করে। আমার ভাই দেশের জন্য মিশনে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর কাছে এখন আমাদের একটাই দাবি- আমাদের সংসার চালানোর জন্য যেন আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। তা না হলে আমাদের না খেয়ে দিন পার করতে হবে।
শরীফুলের চাচা শান্ত সরকার বলেন, এমন মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। আজকে সকালে বগুড়া থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা শরীফুলের বাড়িতে এসে তার বাবাকে এক লাখ টাকার চেক দিয়েছেন। শরীফুলের টাকায় তাদের সংসার চলতো। এখন শরীফুল নেই। আমরা চাই- তার ছোট ভাইকে সরকার থেকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।