পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ব্রডগেজ এ রেলপথে ট্রেন চলবে ১২০ কিলোমিটার গতিতে। এজন্য কেনা হয়েছে এই পথে চলার উপযোগী নতুন ১০০টি কোচ। যার প্রথম চালান চীন থেকে আসবে নভেম্বরের শেষ দিকে। ইতোমধ্যে কোচগুলো তৈরি সম্পন্ন হয়েছে চীনের কারখানায়। তবে কোচ কেনা হলেও প্রকল্পে কোনো লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) কেনা হয়নি। কোচগুলো চালানো হবে অন্য প্রকল্পের লোকোমোটিভ দিয়ে।
পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, যে ১০০টি কোচ আনা হচ্ছে তার মধ্যে ২৫টি নন-এসি চেয়ার কোচ, ৩৫টি এসি চেয়ার কোচ, ১৫টি স্লিপার কোচ, ১৫টি ডাইনিং ও গার্ড রেক সংযুক্ত কোচ এবং ১০টি পাওয়ার কার রয়েছে। এর মধ্যে একটা ট্রেন পরিচালনার জন্য ১৫টি কোচের প্রথম চালান আগামী নভেম্বর মাসের শেষ দিকে বা ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে। বাকিগুলো পরবর্তী চালানগুলোতে আসবে।
জানা গেছে, এই রুটের জন্য ট্রেনের প্রতিটি কোচ অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছে। ফলে দ্রুতগতিতে চললেও কোনো ঝাঁকুনি থাকবে না, ভ্রমণ হবে আরামদায়ক। রেলের ফিনিশড বডি আসছে চীন থেকে। কিন্তু কোচগুলোর কিছু কিছু কম্পোনেন্ট এসেছে ইউরোপ থেকে। কোচের বগি এসেছে জার্মানি থেকে। এছাড়া হুইল, এয়ার ব্রেক, জেনারেটর এবং বগির ফিটিংসগুলো এসেছে জার্মানি ও রোমানিয়া থেকে। বিভিন্ন দেশ থেকে কম্পোনেন্টগুলো প্রথমে চীনে এসেছে। সেখানেই তৈরি হয়েছে কোচের ফিনিশড বডি। দেশে আনার জন্য কোচগুলো বর্তমানে প্রস্তুত আছে
কোচগুলো চীন থেকে বাংলাদেশে আনার পর কিছু কাজ করা হবে। বগি ও বডি সংযোজন করা হবে বাংলাদেশেই। তারপর সেগুলো ট্রায়াল রান করানো হবে। এসব কাজ করতে ২-৩ মাস সময় লাগবে। প্রতিটি কোচে ১০০টি আসন রয়েছে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন সোমবার (৩ অক্টোবর) ঢাকা পোস্টকে বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের জন্য কেনা ১০০টি কোচের প্রথম চালান আসবে।
নতুন কোচগুলোর বিশেষত্ব জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই কোচগুলোতে স্লাইডিং ডোর ব্যবহার করা হয়েছে। এতে বায়ো-টয়লেট রয়েছে। এছাড়া যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোচগুলোর ভেতরে সিসি ক্যামেরা থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত লাইনে ট্রেন চালাব। সরকার চাইলে ২০২৩ সালের জুন মাসেই পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালাতে পারব।
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলকে যুক্ত করার জন্য নির্মিত হচ্ছে ঢাকা-যশোর ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ। এটি বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় চীনভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এই প্রকল্পের কাজ করছে। ১২০ কিলোমিটার গতির ব্রডগেজ রেললাইনটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কেরানীগঞ্জ, শ্রীনগর, মাওয়া, পদ্মা সেতু, জাজিরা, ভাঙ্গা, কাশিয়ানি, নড়াইল, জামদিয়া পর্যন্ত যাওয়ার পর এর একটি শাখা যশোরের রূপদিয়া পর্যন্ত অন্যটি খুলনার সিংগিয়া রেলস্টেশনে যুক্ত হবে।
নির্মাণাধীন এই রেলপথে ২৩.৩৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ২৭৪টি মাইনর ব্রিজ ও কালভার্ট, ৩০টি লেভেল ক্রসিং, ১৩১টি আন্ডার পাস, ৫৮টি মেজর ব্রিজ এবং ২০টি আধুনিক স্টেশন থাকছে।
প্রকল্পের বিশেষ দিক হলো ভায়াডাক্ট ও ব্যালাস্টবিহীন রেলপথ, যা বাংলাদেশে এই প্রথম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকা-খুলনার দূরত্ব হ্রাস পাবে ২১২.০৫ কিলোমিটার। ফলে ঢাকা থেকে খুলনা ভ্রমণে সময় লাগবে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন ঘণ্টা।
প্রকল্পটির গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তদারকি ও পরামর্শ দিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসাল্টেন্ট।
এই প্রকল্প বরিশাল ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে রেলওয়ের মাধ্যমে যুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করছে। বাস্তবায়ন শেষে এটি হবে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের একটি অংশ। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।