শফিক সৈয়দ। অভিনেতা হবেন, এই স্বপ্ন নিয়ে মুম্বাইয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন ছুঁয়েও আবার অন্ধকারে ফিরে গেছেন শফিক। ১৯৮৮ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল মীরা নায়ার পরিচালিত ‘সালাম বম্বে!’। এই ছবিতে নানা পাটেকর, ইরফান খান, রঘুবীর যাদবের মতো নামী তারকারা অভিনয় করেছিলেন।
তবে সে সব তারকাদের সঙ্গে টক্কর দিয়েছিল ১২ বছরের এক শিশু অভিনেতা। মুম্বাইয়ের বস্তি এলাকার একটি বাচ্চা ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শফিক। এতটুকু বয়সে শফিকের অভিনয় দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন দর্শক। এই ছবিতে অভিনয় করার জন্য জাতীয় পুরস্কারও দেওয়া হয় তাকে।
মোট ৫২ দিন শুটিং করেছিলেন শফিক। ছবিতে অভিনয় করে ১৫ হাজার টাকা আয়ও করেছিলেন তিনি। আদতে তিনি ছিলেন বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। বস্তিতেই আস্তানা ছিল তার। হিন্দি ছবিতে যেমন দেখায়, মুম্বাই শহরের জীবনযাত্রা কি আসলে ওই রকম, তা দেখার জন্য কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে মুম্বাইয়ে আসেন শফিক।
তার পর ‘সালাম বম্বে’তে অভিনয় করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, বলিউডেই কাজ করবেন। কিন্তু তার কাছে কাজের কোনো প্রস্তাবই আসেনি। ১৯৯৪ সালে গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘পতঙ্গ’ ছবিতে অভিনয় করার পর তিনি আবার বেঙ্গালুরু ফিরে যান।
বেঙ্গালুরু ফিরে তিনি চেষ্টা করতে থাকেন কন্নড় ছবিতে কাজ করার। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও ব্যর্থ হন। ছবির প্রযোজক শফিককে কাজের সুযোগ দিলেও তিনি কখনো ক্যামেরার সামনে আসতেন না। তার সমস্ত কাজ ছিল ক্যামেরার লেন্সের পেছনেই। কখনো তিনি লাইটম্যান হিসাবে কাজ করতেন, আবার কখনো প্রযোজনার কাজে সহকর্মী হিসাবে।
বিভিন্ন কন্নড় টেলিভিশন ধারাবাহিকেও ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছেন শফিক। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার কারণে শফিক ভালো বেতনের চাকরিও খুঁজে পাননি। অবশেষে বেঙ্গালুরু শহরেই অটোরিকশা চালিয়ে রোজগার শুরু করেন শফিক।
বেঙ্গালুরু থেকে ৩০ কিলোমিটার ভেতরের শহরতলি এলাকায় স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ের সঙ্গে থাকেন শফিক।
সেখানকার একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শফিক জানিয়েছেন, তিনি নিজের জীবনকাহিনির উপর ভিত্তি করে ১৮০ পাতার একটি গল্প লিখেছেন। গল্পটির নামকরণও করেছেন। শফিক এখনো স্বপ্ন দেখেন, এই গল্প কোনো প্রযোজকের পছন্দ হবে এবং এর উপর ছবি তৈরি হবে এক দিন।