পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের (৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে যাচ্ছেন) নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অবসরোত্তর ছুটিতে থাকাকালীন তার নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শফিকুল ইসলামের সই করা এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পুলিশের আইজিপি বরাবর পাঠানো হয়েছে। এর একটি অনুলিপি পেয়েছেন ড. বেনজীর আহমেদ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ড. বেনজীর আহমেদের অবসর প্রস্তুতিজনিত ছুটিকালীন তার নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে গাড়িসহ ১/৬ ফর্মেশনে সাদা পোশাকে এসকর্ট, অস্ত্রসহ ইউনিফর্মধারী দুজন সার্বক্ষণিক দেহরক্ষী এবং ১/৩ ফর্মেশনে হাউসগার্ড সার্বক্ষণিকভাবে মোতায়েনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রজ্ঞাপনে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের অবসরের বিষয়টি জানানো হয়।
ড. বেনজীর ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল আইজিপি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়,
পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদকে ৩০ সেপ্টেম্বর বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫৭ নং আইন) এর ধারা ৪৩(১) (ক) অনুযায়ী সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো।
একই প্রজ্ঞাপনে এক বছরের জন্য তার অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) মঞ্জুর করা হয়।
২০২০ সালের এপ্রিলে পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ড. বেনজীর আহমেদ। আইজিপি হওয়ার আগে তিনি র্যাব মহাপরিচালক ও ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। গোপালগঞ্জে জন্ম নেওয়া বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল দায়িত্ব পাওয়ার পরই ড. বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দূর করতে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনেন। পুলিশের পদোন্নতি পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে গ্রহণের মতো সিদ্ধান্ত নেন। হ্যান্ডস ফ্রি পুলিশিং চালু করতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের জন্য ট্যাকটিক্যাল বেল্ট চালু করেন। নারীদের সাইবার বুলিংয়ের মতো নির্যাতন বন্ধে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে সেবার প্রবর্তন করেন।
আইজিপি হিসেবে বেনজীর আহমেদের উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে- টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের নতুন ইউনিট চালু, ভাসানচরে নতুন পুলিশ স্টেশন নির্মাণ, করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চমানের চিকিৎসাসেবা দিতে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের আধুনিকায়ন এবং ২৫০ শয্যার হাসপাতাল থেকে তা এক হাজার শয্যায় উন্নীতকরণ।
২০১৮ সালে র্যাবের মহাপরিচালক থাকা অবস্থায় দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে প্রশংসিত হন ড. বেনজীর আহমেদ। গুলশান হামলা, শাপলা চত্বর ঘেরাওয়ের মতো সংবেদনশীল মুহূর্তে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সরকারের ‘গুড বুকে’ নাম লেখান তিনি।