বিষে বিষে বিষক্ষয়। এই তত্ত্ব অনুসরণ করে প্রাচীন কালে রাজা এবং অভিজাতদের প্রতিদিন খাবারে সামান্য বিষ রাখার প্রচলন ছিল। যাতে শত্রুপক্ষের বিষ তাদের বিশেষ ক্ষতি করতে না পারে। এই নিয়ম প্রচলিত ছিল গুজরাতের শাসক মেহমুদ বেগাদা বা প্রথম মাহমুদ শাহের ক্ষেত্রেও।
মুজফরিদ বংশের শাসক দাউদ খানের উত্তরসূরি ছিলেন মেহমুদ। আমদাবাদে তার জন্ম ১৪৪৫ খ্রিস্টাব্দে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৪৫৮ খ্রিস্টাদে সিংহাসনে অভিষেক হয় তার। এরপর ১৫১১ খ্রিস্টাব্দ অবধি প্রায় ৫৩ বছর ধরে শাসন করেছিলেন তিনি। সুলতান থাকাকালীন বহু যুদ্ধ জয় করে শত্রুদমন করেন তিনি। তবে তার জন্য তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত নন। বরং, তিনি ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে আছেন তার ভোজনের জন্য। তার দৈনন্দিন খাবারের পরিমাণ শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৪৫৮ খ্রিস্টাদে সিংহাসনে অভিষেক হয় তার, এরপর ১৫১১ খ্রিস্টাব্দ অবধি প্রায় ৫৩ বছর ধরে শাসন করেছিলেন তিনি
তার বিষ খাওয়ার প্রসঙ্গে ছড়িয়ে আছে একাধিক কিংবদন্তি। ইউরোপীয় ভূপর্যটক লুডোভিকো দি ভারথেমা এবং দুয়ার্ত বারবোসা তাকে নিয়ে বহু বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। তাদের বিবরণ বলছে, মেহমুদ বেগাদার ত্বকে কীটপতঙ্গ বসলেও নাকি মরে যেত। এমনকি, সুলতানের থুতু বা লালারসও নাকি ব্যবহৃত হতো শত্রুপক্ষকে বিনাশ করার অস্ত্র হিসেবে। এই বিবরণকে অতিরঞ্জন বলে উড়িয়ে দিলেও সুলতানের বর্ণময় জীবন ম্লান হয়ে যায় না।
সুলতান মেহমুদের শাসনকালে আগত পর্যটকদের বিবরণ বলছে, তিনি নাকি প্রতিদিন প্রাতরাশে খেতেন এক পাত্র ভর্তি ঘি, আর এক পাত্র পূর্ণ থাকত মধুতে। সঙ্গে থাকতো ১৫০টি স্বর্ণবরণ কলা। তার দৈনন্দিন আহারের বড় অংশ জুড়ে ছিল মিষ্টান্ন। খাবারের শেষপাতে খাকত শুকনো বাসমতি চালের তৈরি মিষ্টি পদ। প্রতিদিন নাকি ৫ সের ওজনের মিষ্টি খেতেন তিনি।
তাঁর বিষ খাওয়ার প্রসঙ্গে ছড়িয়ে আছে একাধিক কিংবদন্ত
তার শয্যার পাশে দুইটি থালায় সাজানো থাকত মাংসের পুর ভরা শিঙাড়া। যাতে ঘুম ভেঙে উঠে খিদে পেলে সুলতান খেতে পারেন। তবে শুধু রাজসিক খাওয়া দাওয়াই নয়। শাসনকালে বহু সংস্কারমূলক কাজের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে তার নাম। নিজের সীমানা সুরক্ষিত করার পাশাপাশি রাজত্বকালে নতুন নতুন অংশও জয় করেন তিনি। পাওয়াগড় এবং জুনাগড় কেল্লা জয় করে তিনি ‘বেগাদা’ উপাধি পান।
পাওয়াগড় বা চম্পানীড়কে তিনি নিজের রাজ্যের রাজধানী করেছিলেন। নিজের নামে তিনি চম্পানীড়ের নামকরণ করেন ‘মুহাম্মদাবাদ’। রাজধানীর সুরক্ষার জন্য চম্পানীড় বা মুহাম্মদাবাদকে দুর্ভেদ্য প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলেন তিনি। সুলতানের নির্দেশে বিভিন্ন রকম ফুল ও ফলের বাগানে সাজানো হয়েছিল তার রাজধানীকে। ২৩ বছর ধরে তিল তিল করে সাজানো তার এই রাজধানী ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে ধ্বংস হয় মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের আক্রমণে।
তার শয্যার পাশে সাজানো থাকত মাংসের পুর ভরা শিঙাড়া
তবে তার শাসনে ক্ষতচিহ্ন হয়ে ছিল পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজয়। ১৫০৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে নিজের রাজধানীতেই ছিলেন তিনি। তার পর তিন বছর মাত্র জীবিত ছিলেন। ১৫১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রয়াত হন ৬৬ বছর বয়সে। ন্যায়পরায়ণতা, পরধর্মের প্রতি সম্মান এবং সাহসের জন্য তাকে গুজরাতের শ্রেষ্ঠ শাসকের তকমা দেওয়া হয়। তার পরে সিংহাসনে বসেন দ্বিতীয় মুজফফর শাহ।