জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ভোলায় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে পাকুন্দিয়ায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত শনিবার পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা প্রায় দুইটা পর্যন্ত চলা এই সংঘর্ষে সৈয়দগাঁও চৌরাস্তা, পৌরসদরের পাটমহাল থেকে আদুপাগলার মাজার, পৌরসদর বাজারের চরফরাদী রোড, মির্জাপুর রোড, মলংশাহ মাজার ও ঈশা খাঁ রোড এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় সংঘর্ষের ঘটনায় গত রোববার পুলিশ মামলা দায়ের করে। এই মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনসমূহের ১৩৯ জন নেতাকর্মীর নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত ১৫০০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পাকুন্দিয়া উপজেলার নেতাকর্মী ছাড়াও কিশোরগঞ্জ সদরের বাসিন্দা জেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও পার্শ্ববর্তী কটিয়াদী উপজেলার নেতাকর্মীরা এই মামলায় আসামি হয়েছেন।
এছাড়া প্রবাসে রয়েছেন এমন ব্যক্তিরাও মামলার আসামি হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সৌদি আরব প্রবাসী আতিকুর রহমান লিটু (৪৫) ও দুবাই প্রবাসী রাসেল মিয়া (৩৫)। সৌদি আরব প্রবাসী আতিকুর রহমান লিটুকে ২৭ নম্বর ও রাসেল মিয়াকে ১০০ নম্বর আসামি করা হয়েছে। আতিকুর রহমান লিটু উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এবং রাসেল মিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে ছিলেন। এছাড়া রাসেল মিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি কামাল উদ্দিনের চাচাতো ভাই।
পারিবারিক সূত্র জানায়, আতিকুর রহমান লিটু উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের ছোট আজলদী গ্রামের শাফিউদ্দিন পাঠানের ছেলে। সৌদি আরব প্রবাসী লিটু দেশে এসে ছুটি কাটিয়ে ২০২১ সালের ২রা আগস্ট সৌদি আরবে ফিরে যান। অন্যদিকে রাসেল মিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের চরতেরটেকিয়া গ্রামের ওয়াহাব মিয়ার ছেলে। তিনি মাত্র দুই মাস আগে দুবাই গেছেন। বর্তমানে উভয়েই প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন।
সৌদি আরব প্রবাসী আতিকুর রহমান লিটু সৌদি আরব থেকে ইমো কলের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরব রয়েছেন। গত বছর ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। ছুটি কাটিয়ে গত বছরের ২রা আগস্ট পুনরায় সৌদি আরব চলে যান। তিনি বলেন, আমি এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে আছি। কীভাবে এই মামলায় আমার নাম এসেছে বুঝতে পারলাম না। আমি কী সৌদি আরবে থেকে পুলিশের সঙ্গে মারামারি করেছি? হয়তো বিএনপি করি বলেই প্রবাসে থাকার পরও আমাকে মামলার আসামি করা হয়েছে।
দুবাই প্রবাসী রাসেল বলেন, আমি দুই মাস হলো দুবাইয়ে চলে এসেছি। পুলিশের সঙ্গে মারামারি হলো পাকুন্দিয়ায় আর আমি দুবাইয়ে থেকে আসামি। বিষয়টি হাস্যকর। আমার অপরাধ আমি বিএনপির সমর্থক। তাই দুবাইয়ে বসেই পুলিশের সঙ্গে মারামারি করেছি! বাড়িতে গিয়ে পুলিশ আমাকে না পেয়ে আমার বড় ভাই রহমতুল্লাহ রুবেলকে ধরে নিয়ে গেছে।
ঘটনার দিন আতিকুর রহমান লিটু ও রাসেল প্রবাসে অবস্থানের দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মামলার বাদী পাকুন্দিয়া থানার এসআই মো. শাহ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেককে আটক করেছি। পরে তাদের কাছ থেকে শুনে অন্যদের নাম লিখেছি। অনেক সময় এমনো হয়, এত এত লোকের ভিড়ে এক-দুইটা এদিক-সেদিক হতে পারে। তবে এইক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত কোনো ভুল হয়ে থাকলে তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সে বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. সারোয়ার জাহান জানান, একই নামে একাধিক ব্যক্তি থাকতে পারে। তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি দেখা হবে।