মুক্তি প্রতিক্ষীত ‘আশীর্বাদ’ সিনেমার সেই বিতর্কিত প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। মঙ্গলবার সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর পাঠানো ওই অভিযোগপত্রে জেনিফারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মাহি।
অভিনেত্রী তার অভিযোগপত্রে লিখেছেন, ‘আমি মাহিয়া মাহি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির একজন সদস্য। আমি ২০১২ সাল থেকে সম্মানের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমার ক্যারিয়ারের এই সফালতার পেছনে আমার সহকর্মী শিল্পীদের অনেক অবদান রয়েছে। নানা বিপদেও আপনাদের পাশে পেয়েছি। এ জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রতিটি সদস্যের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
‘দুঃখজনকভাবে আজ আবারও আপনাদের শরনাপন্ন হতে হলো। সম্প্রতি ‘আশীর্বাদ’0 সিনেমার প্রযোজক তাহেরা ফেরদৌস জেনিফার আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা অভিযোগ এনে বাজে মন্তব্য করে যাচ্ছেন। যে সব মন্তব্য ইতোমধ্যে ইউটিউবসহ সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেই সঙ্গে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার হুমকিও দিচ্ছেন।’
‘প্রযোজক জেনিফারের এই সব উদ্দেশ্যপ্রণেদিত বক্তব্য ও জিঘাংসামূলক কর্মকাণ্ডে আমি বিব্রত। এতে আমার মানহানি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তার এই সব বক্তব্যে জনমনে শিল্পীদের সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা সকল চলচ্চিত্র শিল্পীদের ইমেজকেই ক্ষুণ্ন করছে। আমাকে হেয় করাসহ জেনিফার ফেরদৌসের এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
‘এমতাবস্থায় আমার আকুল আবেদন, প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌসের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সেই সঙ্গে আমাকে মানহানি করার বিচার করে শিল্পীদের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
আগামী ২৯ আগস্ট মুক্তি পাওয়ার কথা মুক্তিযুদ্ধের গল্পে নির্মিত ‘আশীর্বাদ’ সিনেমাটি। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এই সিনেমার পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌস। ‘আশীর্বাদ’ তার প্রযোজিত প্রথম সিনেমা। এখানে মাহি রয়েছেন নায়িকার ভূমিকায়। তার বিপরীতে নায়ক জিয়াউল রোশান। তাহলে বিতর্কের শুরু কোথায়?
সিনেমার মুক্তি উপলক্ষে সম্প্রতি রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্ট ‘মিট দ্য প্রেস’-এর আয়োজন করেছিলেন প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌস। সেখানে পরিচালক এবং অন্যান্য কলাকুশলীরা উপস্থিত হলেও দেখা মেলেনি সিনেমার প্রধান দুই চরিত্র রোহান ও মাহির। পরে জানা যায় তাদের দাওয়াতই করা হয়নি। ‘আশীর্বাদ’-এর ‘মিট দ্য প্রেস’, অথচ নায়ক-নায়িকা দাওয়াত পাননি? কেন?
এ প্রসঙ্গে সে সময় প্রযোজক জেনিফার জানান, সিনেমার পোস্টার ফেসবুকে শেয়ার না দেওয়ার কারণে রোশান আর মাহিকে ওই অনুষ্ঠানে ইনভাইট করা হয়নি। তিনি এমন মন্তব্যও করেন, ‘আমরা এখানে সিনেমার প্রচার করতে এসেছি। নায়ক-নায়িকার প্রচার করতে আসিনি।’ এছাড়া মাহির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন প্রযোজক।
তিনি জানান, মাহির দুর্ব্যবহারের কারণেই নাকি একজন প্রোডাকশন বয়কে শুটিং থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যেতে হয়েছিল। ওই প্রোডাকশন বয়ের কাছে নারকেল তেল চেয়েছিলেন মাহি। সেটি দিতে দেরি হওয়ায় মাহি শর্ত দেন, ওই ছেলেকে না তাড়ালে তিনি শুটিং করবেন না। বাধ্য হয়ে ছেলেটিকে শুটিং থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন প্রযোজক।
পাশাপাশি সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে প্রযোজক জেনিফার নায়িকা মাহিয়া মাহিকে নিয়ে খুবই আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলেন। মন্তব্য করেন, মাহি পাবলিক টয়লেটের মতো হয়ে গেছে। পাবলিক টয়লেট যেমন মানুষ পাঁচ-দশ টাকা দিয়ে ব্যবহার করে, মাহিকেও মানুষ ওইভাবে ব্যবহার করে। মাহির সঙ্গে পরিচালক মানিকের সম্পর্ক আছে বলেও জানান তিনি।
এও বলেন, শুটিংয়ের আগে মাহি নানা জায়গায় সময় কাটান। জেনিফার বলেন, তিনি মাহির শরীরের নানা জায়গায় বিভিন্ন দাগ দেখেছেন। একান্তে সময় কাটানোর ফলে ওইসব দাগ হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বলেন, সে সব দাগ ঢাকার জন্য মাহি দীর্ঘক্ষণ ধরে মেকাপ নেন। ধারাবাহিক এমন মন্তব্যের পর অবশেষে শিল্পী সমিতিতে অভিযোগ দিলেন মাহি।
সূত্র : ঢাকাটাইমস