মাঝে মাঝে শোনা যেত কান্নার শব্দ!

নাটোরে কলেজছাত্র মামুনকে বিয়ে করে আলোচনায় আসা শিক্ষিকা খাইরুন নাহারের লাশ উদ্ধারের পর বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি ‘আত্মহত্যা’? না ‘হত্যার’ শিকার হয়েছেন। এমন প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনার পরপরই খাইরুনের সাবেক স্বামী ও মামুনের বিষয়ে নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে।
পুলিশের ধারণা এটি আত্মহত্যা হলেও এ ঘটনায় তার স্বামীকে আটক করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য দিয়েছেন মামুন। তবে অনেক উত্তর নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পুলিশের।

জানা যায়, ১ আগস্ট সাংবাদিকদের কাছে মামুন বলেছিলেন, ‘মন্তব্য কখনো গন্তব্য ঠেকাতে পারে না।’ এই বক্তব্যের মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় নিভে গেল কলেজশিক্ষক খাইরুন নাহারের জীবন প্রদীপ। আর এ নিয়েই মামুনকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

এলাকাবাসী জানান, সাবেক স্বামী খাইরুনকে প্রায় প্রতি রাতেই কল দিতেন। এ নিয়ে মামুনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল তাদের। ফোনের বিষয় নিয়ে মামুন খাইরুনের সঙ্গে বাজে আচরণ করতেন। মাঝে মধ্যে কান্নার শব্দও শোনা যেত বলে দাবি এলাকাবাসীর।

জানা যায়, কলেজ শিক্ষিকা স্ত্রীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন মাদকাসক্ত মামুন। তার লেখাপড়ার যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য নাটোর শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন খাইরুন। তিনি ৩৫ কিলোমিটার দূরে কলেজে প্রতিদিন যাতায়াত করতেন এই ভাড়াবাসা থেকেই। এ ছাড়া মামুনকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন খাইরুন।

শিক্ষিকা খাইরুন নাহারের ভাগ্নের দাবি, মামুনের কারণে অশান্তিতে ছিলেন তার খালামনি। বিয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত সে পাঁচ লাখ টাকা ও একটি পালসার মোটরসাইকেল নিয়েছে। সম্প্রতি ওই মোটরসাইকেল তার ভালো লাগছে না এমন কথা জানিয়ে আরো দামি মোটরসাইকেল চেয়েছে। এ নিয়ে খালামনি মানসিক চাপে ছিলেন।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, নাটোর সদরের বালারিপাড়ায় তাদের ভাড়া করা বাড়িতে তার লাশ পাওয়া গেছে। রাতে স্বামী-স্ত্রী দুইজনে এক সঙ্গেই ছিলেন। রাত ২টার দিকে ছেলেটি বাড়ির বাইরে যায়। দারোয়ানও সেটা জানিয়েছে। এক ঘণ্টা পর ফিরে এসে সে দেখে যে ঘরের দরজা খোলা ও খাইরুন নাহার গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছেন। সেসময় হাতের কাছে ধারালো কিছু না পেয়ে ছেলেটি লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ওড়না পুড়িয়ে তাকে নিচে নামিয়েছে।

মৃত শিক্ষিকা খাইরুন নাহার গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় পৌর এলাকার মো. খয়ের উদ্দিনের মেয়ে এবং উপজেলার খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই তাদের বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় বিয়ের খবরটি ভাইরাল হয়। এতে সারা বাংলাদেশে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়।