লাক ইসলামের সবচেয়ে নিকৃষ্ট বৈধ কাজ। একান্ত প্রয়োজনের জন্য তালাকের এ বিধান রাখা হয়েছে। পুরুষরা শুধু নারীদের তালাক দেবে এমনটিই নয় বরং নারীরাও বৈধ ও উপযুক্ত কারণে এ তালাক নেওয়ার অধিকার রাখে। বিশেষ দুইটি কারণে নারীরা তালাক নিতে পারে। সেই কারণ দুইটি কী?
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চরম অশান্তি দেখা দিলে তালাকের প্রয়োজন হয়। নারীরা বৈধ দুটি কারণে তালাক নেওয়ার অধিকার রাখে। তাহলো-
দীর্ঘদিন দাম্পত্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে
কোনো নারী দীর্ঘদিন দাম্পত্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে তালাক নেওয়ার অধিকার রাখে। অনেক পুরুষ তার বিবাহিত স্ত্রীকে দেশে/বাড়িতে রেখে বছরের পর বছর দূর প্রবাসে কাটিয়ে দেয়। পারিবারিক নানান কারণে স্বামীকে কাছে পাওয়ার দাবিও করতে পারে না। এক্ষেত্রে নারী ধৈর্যধারণ করতে না পারলে নিজ থেকে তালাক নেওয়ার অধিকার রাখে।
স্বামী কাছে না থাকার কারণে অনেক সময় দেখা যায় অন্য পুরুষের প্ররোচনায় কিংবা শয়তানের ধোকায় পড়ে পরকীয়াসহ অবৈধ সম্পর্কে জড়ানোর আশংকা থাকে। আবার অনেক নারী বিপথগামী হয়ে নিজ স্বামীর পরিশ্রমের অর্থ অবৈধ/অনৈতিক সম্পর্কের পেছনে খরচ করে থাকে। এক্ষেত্রে নারী নিজেকে রক্ষায় তালাক নেওয়ার অধিকার রাখে।
তবে দীর্ঘদিন দাম্পত্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকা নারীর জন্য বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। একান্তই তারা যদি ধৈর্যধারণ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং অবৈধ সম্পর্কের কারণে নিজেদের পরকালকে ধ্বংস করে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাদের জন্য তালাক নেওয়ার আগে এ পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা একান্ত জরুরি। তাহলো-
১. স্বামীর অবর্তমানে ধৈর্য ধারণ করতে না পারলে স্বামীকে ঘরে/কাছে ফিরে আসার জন্য দাবি জানানো।
২. স্বামী যদি ফিরে না আসে এবং এ কারণে সে ধৈর্যধারণ করা অসম্ভব হয়; তবে স্বামীর কাছে কারণ উল্লেখ করে তালাক চাওয়া। এতে স্বামী ঘরে ফিরে আসার বিষয়টির গুরুত্বসহ বুঝতে পারবে।
৩. স্বামী যদি ফিরে না আসে এবং তালাক দিতে রাজী না হয় তাহলে ‘মুসলিম পারিবারিক আইন’-এর আওতায় কাজীর মাধ্যমে ‘খুলা’ (তালাক) করে পৃথক হয়ে যেতে পারবে।
এ বিষয়ে ফতোয়া
বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার শায়খ সালিহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহ তার এক ফতোয়ায় উল্লেখ করেছেন, ‘যদি কোনো স্বামী তার স্ত্রী থেকে ছয় মাসের বেশি দূরে থাকে আর তার স্ত্রী তাকে ঘরে ফেরার জন্য অনুরোধ করে; তাহলে তার জন্য ঘরে ফিরে আসা বাধ্যতামূলক।
স্বামী যদি এমন কারণে সফরে থাকে যা তার জন্য ফরজ; যেমন- ফরজ হজ পালন বা বাধ্যতামূলক জেহাদে যোগদান, কিংবা (কোনো কারণে) তার জন্য ঘরে ফিরে আসা সম্ভব না হয়, তবে সেক্ষেত্রে (স্বামীর জন্য) ঘরে ফিরে আসা আবশ্যক নয়।
যদি বৈধ কোনো কারণ ছাড়া স্বামী ঘরে ফিরে আসতে অস্বীকার করে আর তার স্ত্রী খুলা (তালাক) দাবি করে, তবে কাজী/বিচারক স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তাদেরকে পৃথক করে দেবে। কারণ এই ব্যক্তি (স্বামী) তার স্ত্রীকে অত্যাবশ্যকীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।’ (আল-মুলাখ-খাস আল-ফিকহি ২/২৯০)
জৈবিক চাহিদ পূরণে অক্ষম হলে
যদি কোনো স্বামী তার স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণে অক্ষম হয় কিংবা যৌন দুর্বলতার কারণে স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হয় আর এ কারণে স্ত্রীও ধৈর্য ধারণ করতে না পারে তবে করণীয় হলো-
১. স্ত্রী তার স্বামীকে এক বছর পর্যন্ত চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া।
২. যদি চিকিৎসার পরেও স্বামীর অবস্থার পরিবর্তন না হয়; যৌন রোগ থেকে সুস্থ না হয় তবে সেক্ষেত্রে স্ত্রী চিন্তা-বিবেচনা করবে যে, সে এমন বিবাহে আবদ্ধ থাকবে কিনা।
৩. এ পরিপ্রেক্ষিতে স্বামীর সঙ্গে সংসার করা কল্যাণকর নাকি পৃথক হওয়া আবশ্যক বিষয়টি স্ত্রীর উপর নির্ভর করবে।
৪. এ অবস্থায় নারী যদি ধৈর্য ধারণ করতে না পারে, চাইলে সে নারী তার স্বামী বা পরিবারের সঙ্গে আলোচনার করে কাজীর মাধ্যমে খুলা (তালাক) নিতে পারবে। এ অবস্থার শিকার সব নারীর জন্য তা বৈধ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারীকে প্রথম ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। অথবা দাম্পত্য জীবনে অবৈধ পন্থা অবলম্বন না করে দুনিয়া ও পরকালীন জীবনের শান্তি ও সফলতার জন্য বৈধভাবে পৃথক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।