ক্র‍্যাচই ভরসা সেই মামুনুলের, দেখা মেলে না অনুসারী, সহকর্মীদের

জাতীয় রাজনীতিতে কয়েক বছর ধরেই বেশ আলোচিত নাম মামুনুল হক। হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক এই যুগ্ম মহাসচিব গত বছরের ২১ এপ্রিল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে কারাবন্দী আছেন৷ মামলার শুনানির জন্য রুটিন অনুযায়ী তাকে হাজির করা হচ্ছে আদালতে।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার (১৭ জুলাই) পুলিশ প্রহরায় ক্র্যাচে ভর দিয়ে কোর্ট গারদ থেকে তিনতলা সিড়ি বেয়ে পায়ে হেঁটে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে হাজির হন মামুনুল হক। আইনি প্রক্রিয়া শেষে কিছুক্ষণ পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আগে তাকে কাঠগড়ার ভিতরে চেয়ারে বসতে দেয়া হয়।

এদিন আদালতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে পঞ্চম দফায় আরও দুইজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়ব।তবে এদিন সাক্ষ্যগ্রহণেরবপুরো সময়জুড়েই আদালতের কাঠগড়ায় নিরব ছিলেন মামুনুল হক। অসুস্থ থাকায় এদিন তিনি তেমন কোনো কথা বলেননি। কাঠগড়ার ভেতরে তাকে চেয়ারে বসতে দেয়া হয় এবং চেয়ারে বসেই তিনি সাক্ষীর সাক্ষ্য শুনেছেন।

এর আগে এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে পুলিশ প্রহরায় মামুনুল হককে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট গারদে আনা হয়। এরপর দুপুর ১টায় পুলিশ প্রহরায় ক্রাচের উপর ভর দিয়ে কোর্ট গারদ থেকে তিনতলা সিড়ি বেয়ে পায়ে হেঁটে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে হাজির হন মামুনুল হক। আইনি প্রক্রিয়া শেষে কিছুক্ষণ পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আগে তাকে কাঠগড়ার ভিতরে চেয়ারে বসতে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়ন বলেন, মাওলানা মামুনুল হক অনেক অসুস্থ। তাই তাকে কাঠগড়ার ভিতরে চেয়ারে বসতে দেয়া হয়েছিল। তিনি চেয়ারে বসেই সাক্ষীদের সাক্ষ্য শুনেছেন। কাঠগড়ার ভিতরে তিনি কোনো কথা বলেননি।

আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, মামুনুল হক অসুস্থ ছিলেন। তাই তাকে কাঠগড়ার ভিতরে চেয়ারে বসতে দেয়া হয়েছে। সাক্ষীরা সকলেই বলেছেন, মামুনুল হক ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন। তারা মামুনুল হককে নারীসহ আটক করেছিলেন।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয়েছিল মামুনুল হককে। তার একদিন আগেই কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে আনা হয়েছিল তাকে। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আবার নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে সেখান থেকে কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে।

এদিকে আদালতে মামুনুল হকের সহকর্মী- অনুসারীদেরও আদালত প্রাঙ্গনে দেখা মিলছে না আর। গ্রেফতারের প্রথমদিকে দিনগুলোতে পরিবারের সদস্য, সহকর্মী, অনুসারীদের আদালত প্রাঙ্গনে উপস্থিত থাকতে দেখা গেলেও সময়ের ব্যবধানে সেই চিত্র এখন আর নেই। কালেভদ্রে দেখা মিলছে গুটিকয়েক সহকর্মী ও অনুসারীর।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ওই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে তাকে ঘেরাও করেন। পরে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসে রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর করেন এবং তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। এই ঘটনায় ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা করেন ওই নারী। তবে ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছেন মামুনুল হক।