মায়ের মানত ও আশা পূরণ করতে ১৭ বছর সংসার করার পর ফের গ্রামবাসী ও স্বজনদের নিয়ে ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করলেন এক দম্পতি। এ দম্পতি হলেন সাইফুল ইসলাম-হিমেলা খাতুন। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের বাসিন্দা তারা। সাইফুলের বাবার নাম দিয়ানত ইসলাম। দীর্ঘ দেড় যুগ পর এমন বিয়ে উৎসব নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায় চারদিকে। কয়েকদিন ধরে চলছে উৎসব। খাসির বিরিয়ানি, সেমাই, মিষ্টি আর নানা পদ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে প্রতিবেশী ও স্বজনদের।
সাইফুলের মা ছাকেরা খাতুন বলেন, ‘জন্মের পর সাইফুল ইসলাম ভীষণ অসুস্থ ছিলো। সে নড়াচড়া করতো না। গুরুতর অসুস্থ সাইফুল এরপর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে আল্লাহর রহমতে। আল্লাহ সাইফুলকে সুস্থ করলে বিয়ের সময় ১০০ মানুষকে খাসির মাংস ও ভাত খাওয়াব বলে মানত করি। তবে নানা কারণে এতদিন তা হয়নি। এখন সবার সহযোগিতায় মনের আশা পূরণ হয়েছে।
ছাকেরা খাতুন আরও বলেন, জীবনের এক পর্যায়ে প্রতিবেশী হিমেলা খাতুনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সাইফুল ইসলাম। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসী সে সময় জোর করে সাইফুলকে বিয়ে দেয় হিমেলার সঙ্গে। তা আজ থেকে ১৭ বছর আগে ২০০৫ সালের কথা। তখন অর্থকড়ি না থাকায় অনুষ্ঠান করতে পারিনি। এরপর কেটে গেছে এতগুলো বছর। এর মাঝে কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আমি বিছানায় ছিলাম। রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ভিটে ছাড়া আর কিছু নেই।’
অবশেষে কয়েক সপ্তাহ আগে আগে ছেলের বিয়ের আয়োজন করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন ছাকেরা। বাজার থেকে ছাগল কিনে আনেন। আয়োজন করেন বিয়ে উৎসবের।
বিয়ের অনুষ্ঠানে বর ও কনে
ছাকেরার জা ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য জোৎস্না খাতুন বলেন, ‘বৃস্পতিবার গায়ে হলুদের আয়োজন করে এলাকাবাসী ও স্বজনরা মিলে। পরদিন শুক্রবার ইজিবাইক চালক সাইফুলের বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে সাজানো হয় তার প্রিয় ইজিবাইককে। সেই ইজিবাইকে চড়ে মোটরসাইকেল র্যালিসহ পুরো এলাকা ঘোরানো হয়। এতে এলাকার মানুষও অংশগ্রহণ করে। বাবা ও মাকে ইজিবাইকে চড়িয়ে পুরো এলাকার ঘোরান এই দম্পতির ১০ বছরের ছেলে হাসিবুল ইসলাম। সঙ্গে ছিল ৭ বছরের কন্যা সাদিয়া খাতুন।
সাইফুলের প্রতিবেশী ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মনোয়ার হোসেন লালন বলেন, ‘একইদিন দুপুরে খাসির মাংসের বিরিয়ানির সঙ্গে সেমাই, মিষ্টি দিয়ে অ্যাপয়ন করা হয় স্বজন প্রতিবেশী ও গ্রামের কয়েকশ’ মানুষকে। দীর্ঘদিন পর মনের আশা পূরণ করতে পেরে খুশি সাইফুল ও তার স্ত্রী। এলাকার মানুষও যেন উৎসব পালন করেছে।’
শনিবার বিকেলে সাইফুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার ইজিবাইক ও ঘর সাজানো আছে। দওয়াত করে আনা আত্মীয়রা বাড়িতে অবস্থান করছেন। প্রতিবেশীরাও অনেকে আসছেন তাদের দেখতে।
সাইফুলের প্রতিবেশী আনিসুল ইসলাম জানান, এমন বিয়ে তারা আগে দেখেননি। বিয়েতে তারা অংশ নিয়েছিলেন। খাসির মাংসের বিরিয়ানির সঙ্গে ছিলো নানা পদ। মানুষ খুব আনন্দ করেছে।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি হিমেলাকে পছন্দ করতাম। এলাকার মানুষ তখন জোরপূর্বক হঠাৎ করে বিয়ে দিয়ে দেয়। তখন অনুষ্ঠান করার মতো সামর্থ ছিলো না। আমার মা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। আমার মা ও আমার আশা ছিলো বিয়েতে মানুষকে দাওয়ার করে খাওয়াব, আনন্দ করব। ১৭ বছর পর সেটা পালন করতে পেরে ভালো লাগছে। এলাকার মানুষও সহযোগিতা করেছে।’
হিমেলা খাতুন বলেন, ‘আমার শাশুড়ি মানত করেছিলো। তার আশা পূরণ করতেই এমন আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজন করতে পেরে সবাই খুশি।’
বাবা-মায়ের বিয়ের উৎসবে অংশ নিতে পেরে খুশির কথা জানান ছেলে হাসিবুল ও মেয়ে সাদিয়াও।