গফরগাঁওয়ের খায়রুল্লাহ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

ভর্তি বাণিজ্য, সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রহিমার খাতুনের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি ওই স্কুলের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. খোরশেদুজ্জামান, হাসিনা মমতাজ, মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, কবীর আহমেদসহ ১৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা মন্ত্রণালয়ে রহিমা খাতুনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে একটি প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় প্রধান শিক্ষক অভিযোগকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরর নীতিমালা অনুসারে, বিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্লাসে দুটি করে শাখাতে ৬০ জন করে মোট ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। সেই হিসাবে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি শ্রেণিতে ১২০ জন করে বিদ্যালয়ে সর্বমোট ৬০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। এই সংখ্যার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূত। অথচ দেদারসে চলছে ভর্তির কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ১৪০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিটি ক্লাসে আনুমানিক ২৩০ জন থেকে ৩০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথমদিকে নিয়ম মেনেই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি এবং ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬০০ জনই ছিল। কিন্তু বিদ্যালয়ের অন্য সব শিক্ষকদের অগোচরে একক সিদ্ধান্তে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে শুরু হয় শিক্ষার্থী ভর্তি। বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সজাগ হন শিক্ষকবৃন্দ, তবে তাতেও কোনো ফায়দা হয়নি। উল্টো সাধারণ শিক্ষকদেরকেই পড়তে হয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার রোষানলে।

নাম না বলার শর্তে বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা প্রতিনিয়ত নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করেন। তার এসব নিয়মবহির্ভূত ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে গেলে শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন এবং নানাভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে আসেন। তার অসদাচরণমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরে আবেদন জানানো হয়েছে। তিনি (রহিমা খাতুন) সবসময় নিজের ইচ্ছা মতো কাজ করেন। অন্যান্য শিক্ষকদের কোনো কাজে লাগান না এবং তাদের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

অতিরিক্ত ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রহিমা খাতুন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না। পরবর্তীতে আবার তাকে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি কল কেটে দেন।

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা এবং ভর্তি নীতিমালা বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, সরকারি স্কুলগুলোতে সাধারণত দুটি শাখায় ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে। এছাড়াও সরকারি কর্মকর্তারা বদলি হলে তাদের সন্তানরা ভর্তি হতে পারবে কিন্তু সেক্ষেত্রে ১০টি কোটার বেশি নয়।

গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদুর রহমান যুগান্তরকে জানান, খায়রুল্লাহ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার অনিয়মের বিষয়ে ইতিমধ্যে (মাউশি) থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সেই স্কুলের আরো শিক্ষক আছে স্কুলে হাজির না হয়ে বেতন ভাতা নিচ্ছে তাদের ব্যাপারে ও তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিবে। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা দুজনে মিলে স্কুলে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে টাকার বিনিময়ে বেশি ছাত্রী ভর্তি করিয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে। আমি ভর্তি কমিটির সদস্য হওয়া সত্বেও আমাকে কোনো বিষয়ে অবগত করা হয়নি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নিজের আধিপত্য বিস্তার করে নিজের ইচ্ছামত স্কুল পরিচালনা করছেন।