এখনো গোসল নিয়ে ভয়ে থাকে বস্তির ৭২ শতাংশ মেয়ে

রাজধানীতে ঘিঞ্জি বস্তি এলাকায় মানুষের কঠিন জীবনযাত্রা অনেকেরই অজানা নয়৷ দেশের উন্নয়ন হলেও এখনো কোনো ধরনের উন্নয়নের ছায়া পরে নি এসব বস্তিতে। এখনো এসব বস্তিতে গোসল নিয়ে ভয়ে থাকে ৭২ শতাংশ মেয়ে। সম্প্রতি বস্তি এলাকায় থাকা কিশোরী ও তরুণীদের জন্য নিরাপদ গোসলখানা নিয়ে জরিপে এ তথ্য জানা গেছে। ওই এলাকায় বসবাসরত মেয়েরা জানিয়েছেন, খোলা জায়গায় গোসলের সময় লোকজন তাকিয়ে থাকত। খুব অস্বস্তি হতো। সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হতো মাসিকের সময়।

গত শনিবার (১১ জুন) রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় এক রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বস্তি বা নিম্নআয়ের মানুষের বসবাসের এলাকায় থাকা কিশোরী ও তরুণীদের জন্য নিরাপদ গোসলখানা নিয়ে জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। ‘নিরাপদ গোসলখানা সবার জন্য সবখানে’ স্লোগান নিয়ে রাজধানীর ধলপুর, মালেক মেম্বার, আইজি গেট এবং ম্যাচ কলোনি বস্তিতে এ বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে অংশ নেয় ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি ৪১৭ জন কিশোরী ও তরুণী। জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ওয়াশ স্পেশালিস্ট এসএম তারিকুজ্জামান।

কিশোরী ও তরুণীদের জন্য নিরাপদ গোসলখানা নিয়ে করা জরিপের অন্তর্ভুক্ত চারটি স্থানের তথ্য বলছে, ৭২ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী উন্মুক্ত গোসলখানায় তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকে। ওই এলাকার কেউ বা আশপাশের উঁচু ভবন থেকে কেউ উন্মুক্ত গোসলখানায় গোসলের দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে কি না, তা নিয়ে ভয়ে থাকে অনেক মেয়ে। উন্মুক্ত গোসলখানায় পুরুষ ও বয়স্ক নারীদের অশোভন মন্তব্য, গালমন্দ ও যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই চার এলাকার ৯৯ শতাংশ গোসলখানাই উন্মুক্ত। ওইসব গোসলখানার মাত্র ১৫ শতাংশ মেয়েদের জন্য আলাদা। বাকিগুলো নারী-পুরুষকে একসঙ্গে ব্যবহার করতে হয়। গোসলখানাগুলোতে ছাদ ও দেওয়াল না থাকায় মেয়েদের কোনো গোপনীয়তা থাকে না। অনেক কিশোরী বয়স্ক নারীদের অশোভন মন্তব্যের শিকার হয়। গোসলের সময় পুরুষরা থাকায় অস্বস্তিতে ভোগে তারা।

এছাড়া একটি গোসলখানা অনেকেই ব্যাবহার করে এমন তথ্যই জরিপে উঠে এসেছে। জরিপ প্রতিবেদন আরও বলা হয়, একটি গোসলখানা ৩৫ থেকে ৪৫ জন ব্যবহার করে থাকে। ফলে দীর্ঘ সারি থাকে গোসলের জন্য। ৭৫ শতাংশ মেয়ে জানিয়েছে, তারা সহজে জায়গা পায় না। কিছুটা বেশি সময় লাগলে অন্যদের গালমন্দ শুনতে হয়। মাসিকের সময় দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। রাতের বেলায় গোসলের জন্য তারা অপেক্ষা করে। সেটা তাদের জন্য আরও নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে দেয়। আটজন মেয়ে জানিয়েছে, ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে তারা ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার হয়েছে।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এমপাওয়ারিং গার্লস ফর ইকোনমিক অপরচুনিটি অ্যান্ড সেফ স্পেস-ই গ্লস মডেল প্রকল্পের আওতায় ওই চার স্থানে ১৫টি পাকা গোসলখানা স্থাপন করেছে। এতে সহযোগী সংস্থা ছিল পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি)। নিরাপদ গোসলখানার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার ও সমীক্ষা পরিচালনায় সহায়তা করে যুব সংগঠন বাংলাদেশ ইয়ুথ সোসাইটি (বিওয়াইএস)। সংবাদ সম্মেলনে আলোচনায় অংশ নেন সংস্থার প্রকল্প ব্যবস্থাপক মানিক কুমার সাহা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রচার ব্যবস্থাপক সেমন্তী মঞ্জরী। ধন্যবাদ জানান সংস্থার কেন্দ্রীয় ও উত্তরাঞ্চলের প্রধান আশিক বিল্লাহ।