সরকারি চাকরি পেয়েছেন স্ত্রী। তবে বেকার স্বামী তা মেনে নিতে পারেননি। তার আশঙ্কা স্ত্রী চাকরি করলে তাকে ছেড়ে হয়তো চলে যাবেন। আর এই আশঙ্কা থেকে স্ত্রীর হাত কেটে ফেলেন স্বামী। গত শনিবার এমন ঘটনা ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম বিধানসভা এলাকায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের খবরে বলা হয়, ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম রেণু খাতুন। অভিযুক্তের নাম শরিফুল শেখ। রেণুর শ্বশুরবাড়ি কেতুগ্রামের কোজলসা গ্রামে।তিনি কেতুগ্রামের চিনিসপুর গ্রামের আজিজুল হকের মেয়ে। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে কোজলসা গ্রামের সিরাজ শেখের একমাত্র ছেলে শরিফুলের সঙ্গে রেণুর বিয়ে হয়।
রেণুর বিয়েতে এক লাখ টাকা, আট ভরি গহনা, একটি স্কুটি ও আনুষাঙ্গিক আরও কিছু জিনিস যৌতুক হিসেবে শরিফুলকে দিয়েছিলেন আজিজুল হক। রেণু নার্সিং কোর্স সম্পন্ন করা। তিনি দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স পদে চাকরি করছিলেন। এরপর সরকারি চাকরিতে পরীক্ষা দিয়ে তিনি উত্তীর্ণ হন। কয়েকদিন আগেই চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে যোগদানের অপেক্ষায় ছিলেন।
রেণুর ভাই রিপন শেখ বলেন, ‘সরকারি চাকরি পাকা হয়ে গিয়েছে বলে আমার বোন দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি থেকে ইস্তফাপত্র জমা দিতে গিয়েছিল। শনিবার বাড়ি ফিরে প্রথমে আমাদের বাড়িতে আসে। তারপর রাতে শ্বশুরবাড়ি চলে যায়। রাতেই খবর পাই বোনের হাত কেটে নেওয়া হয়েছে। এরপর রেণুর যাবতীয় সার্টিফিকেট ও চাকরি সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে পালিয়েছেন শরিফুল।’
রেণুর বাবা আজিজুল হক বলেন, ‘মেয়ে আমাদের বারবার বলছিল ওকে চাকরি করতে দেবে না। সে জন্য আমার জামাই, মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়ি চাপ দিচ্ছিল। মেয়ে সরকারি চাকরির সুযোগ ছাড়তে রাজি ছিল না। কিন্তু ওরা যে এমন করতে পারে ভাবিনি। ওদের ধারণা ছিল আমার মেয়ে চাকরি করতে গেলে আর বোধহয় স্বামীর ঘর করবে না।’
আজিজুল হক জানান, শনিবার রাতে তার জামাই শরিফুল শেখ কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করে। রাত ১১টার দিকে রেণু শুয়ে পড়লে দুই বন্ধুকে নিয়ে রেণুর ওপর চড়াও হন শরিফুল। ধারাল অস্ত্র দিয়ে তিনি রেণুকে এলোপাতাড়ি কোপ মারেন। এতে রেণুর ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
রেণুর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে এ হাসপাতালেই তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।
রেণুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরে এই বেসরকারি হাসপাতালে চাকরির সময় স্ত্রীর সঙ্গেই থাকতেন শরিফুল। নিজ গ্রামে শরিফুলের বাবা সিরাজ শেখের একটি মুদির দোকান আছে। মাসখানেক আগে বাড়িতে চলে আসার পর বাবার দোকানেই বসতেন শরিফুল।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় শরিফুল, তার বাবা-মা ও দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।