সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর থেকে, গত দুই দিন ধরে নিখোঁজ স্বামীর সন্ধানে ছবি হাতে নিয়ে, ঘুরে বেড়াচ্ছেন রেশমি। কিন্তু, কোথাও নেই স্বামী কাভার্ডভ্যান চালক শাহজাহানের খোঁজ। গৃহবধূ রেশমির চোখে এখন গভীর শোক আর দুশ্চিন্তার অশ্রু। সোমবার (৬ জুন) দুপুরে, রেশমি এসেছেন ডিএনএ পরীক্ষার জন্য। কোলে তিন মাসের ছেলে সন্তান রিহাদ; বাম হাতে ধরেছিলেন তিন বছর বয়সী আরেক ছেলে রিহানকে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রের সামনে দেখা গেছে রেশমিকে।
রেশমি জানান, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি নাজিরহাটে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। স্বামী কাভার্ডভ্যান চালক শাহজাহানের সঙ্গে শনিবার (৪ জুন) রাতে তার শেষ কথা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছিলেন কাভার্ডভ্যান নিয়ে ভাটিয়ারী যাচ্ছে। আগেও অনেকবার সেই ডিপোতে গিয়েছিল। এবার গিয়ে আর ফিরে আসেনি। সেই রাত থেকেই রেশমি বিভিন্ন স্থানে ছুটোছুটি করেছেন, কিন্তু খোঁজ মেলেনি তার স্বামী শাহজাহানের। রেশমি বলেন, “জানিনা কোথায় গেলে তাকে ফিরে পাবো। অন্তত লাশটা পেলেও সান্ত্বনা পেতাম। একইভাবে, সন্তানের খোঁজ পেতে ডিএন নমুনা দিতে এসেছেন হেমায়েতুল্লাহ।
নোয়াখালী জেলার দক্ষিণ হাতিয়ার বাসিন্দা হেমায়েতুল্লাহ। শনিবার (৪ জুন) গভীর রাত থেকেই প্রিয় সন্তানের খুঁজে দিশাহারা। ছেলে মাইনুদ্দিনের (২০) ছবি নিয়ে কাঁদছিলেন তিনি। হেমায়েতুল্লাহ জানান, আশুলিয়া থেকে কাভার্ডভ্যানে মালামাল নিয়ে চট্টগ্রামের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে এসেছিলেন তার ছেলে।শনিবার রাতে ছেলে ভিডিওতে আগুনের সেই দৃশ্য দেখাচ্ছিলেন। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাইনি তার।
এছাড়াও, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট এলাকার মো. রাসেলের (২০) খোঁজে তার স্বজনরা ডিএনএ নমুনা কেন্দ্রে অপেক্ষা করছেন। রাসেল গাড়ির ওয়্যারিং-এর কাজ করতেন। এ রকম আরও অসংখ্য স্বজন অপেক্ষমান ডিএনএ নমুনা কেন্দ্রের সামনে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে ছুটে বেড়াচ্ছেন অনেকে। প্রিয়জনের সন্ধান না পেয়ে হতাশ স্বজনেরা শেষ পর্যন্ত আসছেন ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্রে।
গতকাল সোমবার (৬ জুন) দুপুর পর্যন্ত, নিখোঁজ ৮ জনের বিপরীতে ১২ জন নিকট আত্মীয় ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।