বাদাম বিক্রেতার মন খারাপ…

দিন দিন বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। মানুষের খাওয়ার চাহিদা স্থির বা আংশিক বাড়লেও থেমে নেই চড়া দাম। ফলে বেশি দামে পণ্য কিনে হয়তো বাড়িয়ে বেচে, নয়তো পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয়। এমনই একজন বাদাম বিক্রেতা মিনহাজুল (২৫)। সারাদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে পায়ে হেঁটে বাদাম বিক্রি করা-ই তার কাজ।

বাদাম বিক্রি করে একটা সময় খেয়ে-পরে ভালো থাকতেন মিনহাজুল। তবে এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ উচ্চমূল্যের বাজারে আগের মতো অল্প দামে বেশি পরিমাণ বাদাম দিতে পারেন না। এজন্য ক্রেতাদেরও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। তাদের বুঝাতে হয়, পণ্যের দাম বেড়েছে, তাই পরিমাণ কম। সারাদিনের এমন বাকবিতণ্ডায় বেজায় মন খারাপ হয় মিনহাজুলের।

মিনহাজুল এমন চিত্রের একজন প্রতিনিধি মাত্র। শহরের প্রায় সব হকারেরই এমন অবস্থা এখন। আয় কমেছে, অথচ বেড়েছে ব্যয়।

মিনহাজুলের কাছে যখন ক্রেতারা ১০-২০ টাকার বাদাম কেনেন, তখন চমকে উঠেন। কারণ আগের চেয়ে পরিমাণ প্রায় অর্ধেক কমেছে। প্রশ্ন করলে মিনহাজুল আস্তে করে উত্তর দেয়, ‘দেশে যে সব জিনিসের দাম বেড়েছে; সেগুলো কেউ দেখে না?’

তিন ভাই-দুই বোনের মধ্যে মিনহাজুল ছোট। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে। সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় একা সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন মিনহাজুল।

পৌর শহরের ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর মাঠে বৃহস্পতিবার (২ জুন) রাতে কথা হয় মিনহাজুলের সঙ্গে। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে সবকিছুরই বেড়ে গেছে। আগে যে বাদাম ১২০ দিয়ে কিনেছি, সেটা এখন ১৫০ টাকা।

মিনহাজুল আরও বলেন, প্রতিদিন সাড়ে তিন কেজি বাদাম বিক্রি হয়। গত কয়েকদিনে দাম বাড়ার ফলে এ পরিমাণ বাদাম কিনতে ১৫০ টাকা বেশি খরচ হয়। দাম বাড়ার ফলে মানুষকেও কম দিতে হয়। কিন্তু এই কম দিতেও খারাপ লাগে। কারণ হাতের মুঠ ভরে বাদাম বিক্রি করে অভ্যাস। সবসময় এক নিয়মে বাদাম বিক্রি করেছি, এখন কম দিতেও খারাপ লাগে।

‘বাদাম বিক্রি করার কাগজের ঠুঙির দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ১০-১৫ টাকা। সব মিলিয়ে যেন বাদাম বিক্রি করাও কষ্ট হয়ে গেছে। সকাল ৯-১০টা পর্যন্ত সাড়ে তিন কেজি বাদাম বিক্রি করলে লাভ থাকে ৫০০-৬০০ টাকা। বাজারে তেল, পেঁয়াজ, ডাল থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বাড়ছে।’

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিনহাজ বলেন, নিজের বাসার খরচ দিয়ে চলা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে বাড়িতে কীভাবে টাকা পাঠাবো। এমনভাবে যদি সবকিছুর দাম বাড়তেই থাকে, তাইলে গরিবের মরণ ছাড়া উপায় থাকবে না।