মেঘনাপাড়ে সন্তান প্রসব করিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন ৩ চিকিৎসক

সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে রাত ১০টার দিকে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া ঘাটে ঘুরতে যান চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. সুরাইয়া, ডা. ফাইয়াজ ও ডা. নাহিদ।

উদ্দেশ্য ছিল মেঘনার পাড়ে বসে সেই দিনের রাতের খাবার সারবেন এ তিন সহকর্মী। কিন্তু সেখানে গিয়ে এক অসহায় প্রসূতির প্রসব করিয়ে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তারা। ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে।

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার ডা. ফাইয়াজ হোসেনের ফেসবুক আইডিতে ঘটনাটি শেয়ার করলে তা সকলের নজরে আসে। সকলে তাদের এ মহান কাজের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। এমনকি আজ শুক্রবার (২৭ মে) সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ থেকেও এ তিন চিকিৎসককে ধন্যবাদ জানানো হয়।

জানা গেছে, গত বুধবার রাতে গোটা দিনের ক্লান্তি কাটাতে প্রশান্তির খোঁজে বেতুয়ার মেঘনা পাড়ের খোলা রেস্টুরেন্টে এসেছিলেন ডা. সুরাইয়া ইয়াসমিন, ডা. ফাইয়াজ ও ডা. নাহিদ হাসান। বেতুয়া পার্কের মেঘনার ভাসমান চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন তারা। খাবারও চলে এসেছিল টেবিলে।

ওইসময় রাত ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে মনপুরা থেকে মুক্তা নামের এক প্রসূতি মা-সহ পরিবারের তিন সদস্যদের নিয়ে একটি স্পিডবোট ঘাটে ভিড়ে। বোট থেকে ঘাটে নামার সময়ই বাঁধল বিপত্তি। প্রসূতি মা মাটিতে বসে পড়লেন এবং প্রসব বেদনায় ছটফট করতে শুরু করলেন।

ঘাটে বেড়াতে যাওয়া চিকিৎসকরা আর্তনাদ শুনে দ্রুত চলে গেলেন ঘটনাস্থলে। চিকিৎসকদের মধ্যে ডা. সুরাইয়া ইয়াসমিন কোনো আগপিছ না ভেবেই তিনি এবং সঙ্গীরা মিলে নেমে পড়েন তাদের দায়িত্বে।

ডা. ফাইয়াজের ভাষ্যমতে, ডা. সুরাইয়া যেন কোনো ফেরেশতার মতোই বাবুর মা এবং বাবুর জন্যে আবির্ভূত হন এবং মাকে আশ্বস্ত করে সেখানেই নরমাল ডেলিভারির জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুত করেন।

বাকি চিকিৎসকরা অল্প সময়ের মধ্যে দূরের একটি ফার্মেসি থেকে ব্লেড এবং কর্ড ক্ল্যাম্প আনতে আনতেই ডা. সুরাইয়া কোনো ঝামেলা ছাড়াই নদীর পারেই শিশুটির ডেলিভারি সম্পন্ন করেন। পুরোটা ডেলিভারি তিনি সম্পন্ন করেন একদম খালি হাতে।

ডা. সুরাইয়া এবং সঙ্গীদের প্রচেষ্টায় সেদিন রাতে পৃথিবীতে আলো দেখল একটি নতুন জীবন। মা এবং শিশু দুজনই সুস্থ আছেন।

ডা. ফাইয়াজ তার ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যমে বলেন, নিত্যদিনের এমনই হাজারো ঘটনার সাক্ষী এবং সঙ্গী আমরা। ড. সুরাইয়ার মতো সাহসী ডক্টররা মাঠ পর্যায়ে সামান্য রিসোর্স দিয়েই সেবা দিচ্ছেন এবং অসংখ্য জীবন বাঁচানোর মাধ্যম হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তার। কিন্তু কেউ কী জানত স্রষ্টা আসলে কী উদ্দেশ্যে সেখানে আমাদের পাঠিয়েছিলেন?