সন্তানের কাছে সবচে দামী মায়ের মুখ। ছোটবেলায় হামাগুড়ি থেকে হাঁটতে শেখার পুরো যাত্রাপথ সঙ্গী হয়ে থাকেন মা। জীবনের প্রতিটি ধাপে সন্তানকে উৎসাহ দেন। মাকে নিয়ে সন্তানদের অনুভূতি জানতে বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন বয়সী মানুষের কাছে যায় ঢাকা মেইল। মাকে নিয়ে তারা তাদের অনুভূতির কথা জানে। এসব নিয়েই এই প্রতিবেদন।
এলমা খন্দকার এষার কাছে মা হচ্ছেন শক্তি। মাকে নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে যান। এষা বলেন, ‘মাকে ছাড়া আমি শূন্য। মায়েরা কীভাবে জানি সব পারেন, পেরে যান। মা থাকলে জীবনের সমস্ত বিপদ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কখনো মাকে জড়িয়ে ভালোবাসি বলা হয় না। কিন্তু মা আমার শক্তি। বেঁচে থাকার কারণ।’
মমতাময়ী মা সন্তানের প্রয়োজনে হয়ে ওঠেন প্রতিবাদী। শিমুল চন্দ টুম্পা বলেন, ‘মা বলেছিলেন, তার মেয়েরা চাকরি করবে, তারপর বিয়ে দেবেন। এই কথাটা তিনি রেখেছিলেন।’
পেশায় চিকিৎসক তাসমিয়া নূর। মাকে নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আজ আমি যা, যেটুকু আমার অর্জন, তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমার মায়ের। আম্মুকে ছোটবেলা থেকে খুব ভয় পেতাম আর ভালোবাসতাম না বেশি তার কড়া শাসনের জন্য। কিন্তু যখন বড় হলাম, বিয়ে হলো, তখন বুঝলাম যে আম্মু ছাড়া পৃথিবীতে কেউ আমাকে এতো বেশি ভালোবাসেন না। আর ছোট থেকে সেই কড়া শাসনই আমার জীবনের সাফল্য আনতে কতটা ভূমিকা রেখেছে। এখন বুঝি মাকে ছাড়া আমার একদিনও চলবে না।’
মায়ের প্রতি অনুভূতি প্রকাশ করে তারিফ জীবরান বলেন, ‘মায়েদের কোনো ছুটি থাকে না, মায়েদের কোনো অভিমান থাকে না। মায়েদের ভালোবাসার জন্য আলাদা কোনো দিনের দরকার হয় না, বছরের সবগুলো দিনই মা দিবস আমার কাছে। মা দিবস মানে প্রতিদিন বাসায় মা বকার আগে ঢোকা। চুলটা একটু ছোট করে কেটে বাসায় আসা। মাকে আলাদা করে হয়তো কোনোদিন জড়িয়ে ধরে বলতে পারিনি আর পারবও না সংকোচের কারণে, তবে মাকে ভালোবাসি অনেক।
maমা না থাকলে তার স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচতে চান সব সন্তান। প্রভা নূরের ক্ষেত্রেও তাই। মায়ের সঙ্গে তোলা একমাত্র ঘোলাটে ছবি দেখে তাই মাকে স্মরণ করেন তিনি। জীবনের প্রতিটি ধাপে মায়ের অভাব বোধ করেন নিয়মিত।
মাকে নিয়ে সুবোধ ঘোষ অন্তু বলেন, ‘মা, জীবনের প্রথম দেখা তোমার সঙ্গে, তুমি হচ্ছো আমার পরিবারে অলরাউন্ডার, কত দিকে তোমার খোঁজখবর, চিন্তা। আমার হাসি-কান্না সব তুমি দেখার সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যাও। মা তুমিই পৃথিবীর সবার সেরা।’
maমায়ের প্রতি অনুভূতি প্রকাশ করে হুমায়ারা তাহসীন বলেন, ‘জীবনের প্রথম ধাপ, প্রথম মুখের বুলি ফোটা, প্রথম হাসি, প্রথম কান্না, প্রথম খাবারের স্বাদ নেওয়া, প্রথম হোঁচট খাওয়া, আবার উঠে দাঁড়ানো সবই মাকে ঘিরে। আজ বেঁচে থাকা, পথ চলা, সব কিছুই মায়ের জন্য।’
মায়েরা স্বপ্ন বুনতে জানেন। এমনটা মনে করেন দেবব্রত ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘আমার মা, যিনি নিজের হাত দিয়ে আমাদের মাঝে স্বপ্ন বুনতে জানেন। যাকে আমি কখনো অবসর থাকতে দেখিনি। স্কুল শিক্ষক ছিলেন বলে সংসার কিংবা ঘরের বাহির সব জায়গাতেই তিনি সমান ব্যস্ত। আদতে দুই হাতে তিনি সব সামলালেও বাস্তবে তিনিই আমার দশভূজা দুর্গা দেবী। যিনি নিজের হাসিখুশিকে বিসর্জন দিয়ে হাসি ফুটিয়েছেন সংসারের সবার জন্য। মাকে ভালোবাসি এটা মা জানেন। যেটা জানেন না সেটা বলি, জীবনের শেষদিন যেন মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে পারি। সৃষ্টিকর্তা মাকে সুস্থ রাখুক, ভালো রাখুক।’