স্ত্রী-সন্তান খুনের পর বাসের নিচে ঝাঁপ দেন চিকিৎসক

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নে শয়ন কক্ষ থেকে পাশাপাশি পড়ে থাকা মা এবং দুই মেয়ের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার (৮ মে) সকালে তিনটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত নারীর স্বামী আসাদুজ্জামান রুবেলকে (৪০) আটক করেছে পুলিশ। রবিবার (৮ মে) সকালের দিকে উপজেলার পাচুরিয়া এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটককৃত আসাদুজ্জামান রুবেল উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের আঙ্গারপাড়া গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে। তিনি পেশায় একজন গ্রাম্য দন্ত চিকিৎসক এবং উপজেলার বানিয়াজুরি এলাকায় তার চেম্বার রয়েছে।

ঘিওর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহাম্মেদ বিপ্লব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন, মা লাভলী আক্তার (৩৫), বড় মেয়ে ছোঁয়া (১৬) এবং ছোট মেয়ে কথা (১২)।

রুবেল তার স্ত্রী ও দুই কন্যাকে ধারালো দা দিয়ে জবাই করে (৪০) হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন প্রতিবেশীদের। রোববার ভোররাতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর রুবেল সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাচুরিয়া এলাকায় বাসের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। স্থানীয়রা জানান, এ সময় তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।

রুবেলের প্রতিবেশী সোহেল হোসেন জানান, ২০ বছর আগে রুবেল ও লাভলী ভালোবেসে ঘর বাঁধেন। দীর্ঘদিন তারা সুখে-শান্তিতে সংসার করে আসছিলেন। পনের বছর ধরে রুবেল আঙ্গারপাড়া গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া জমিতে একটি ছাপড়া ঘরে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ বাড়তে থাকে। শনিবার রাতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।

নিহত লাভলীর ভাতিজা সাইফুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি একটি ভুল চিকিৎসা করার দায়ে রুবেলকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ওই জরিমানার টাকা আজ রোববার দেওয়ার কথা ছিল। এ নিয়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। স্ত্রী ও দুই কন্যাকে হত্যা করে তিনি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাচুরিয়া এলাকায় বাসের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় পাচুরিয়া থেকে উদ্ধার করে পুলিশের কাছে সোর্পদ করেছে।

ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত রুবেলকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তিনি আরও বলেন, ঋণগ্রস্ত থাকায় অভিযুক্ত ব্যক্তি হতাশা থেকে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় নিহত লাভলী আক্তারের বাবা সাইজউদ্দিন বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করবেন।