আগামী নির্বাচনে জেতানোর দায়িত্ব আমার না: শেখ হাসিনা

আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের কোনো এমপিকে জেতানোর দায়িত্ব নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (৭ মে) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তিনি এমনটাই জানিয়েছেন বলে সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন। এদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় সভা শুরু হয়। রুদ্ধদ্বার সভায় শেখ হাসিনা বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সারা দেশে ইভিএমে হবে। ফলে বিকল্প উপায়ে ভোটে জিতে যাওয়ার চিন্তা করার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে দলটির একাধিক নেতা এসব কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত নির্বাচন নিয়ে এখনো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাকে জবাব দিতে হয়। আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও কঠিন হবে। যোগ্য প্রার্থী বেছে নিতে সারাদেশে জরিপ চলছে। তিনি বলেন, সবকিছুই কঠিন থেকে কঠিনতর হবে এবার। বিএনপির নেতা তারেক রহমান এবার রমজানে ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গেও ভার্চুয়ালি সভা করেছে। পশ্চিমাদেশে অন্তত ৫০টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে। তারা কিন্তু চুপ করে বসে নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, দল গোছাতে হবে। সর্বস্তরে সম্মেলন করে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। সম্মেলন যথাসময়েই হবে। সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য ১৪ দলীয় জোটে থাকা ছোটদলগুলো যারা অনেকটাই অস্তিত্বহীন তাদের আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে শেখ হাসিনা বলেন জোট থাকবে। ওই নেতা সহযোগী সংগঠনর ব্যাপারটি আলোচনায় টেনে আনলেও দলীয় সভাপতি এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেননি।

জানা গেছে, বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের রিপোর্ট পেশ করেন। সেখানে তারা তৃণমূলের সম্মেলন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের বিষয়টি উপস্থাপন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্ধান্ত দেন, যে সব সাংগঠনিক শাখায় এখনো সম্মেলনে হয়নি, সেই শাখার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যারা বিরোধিতা করেছেন তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য। তবে তার আগে তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, যদি কোনো সাংগঠনিক শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার অভিযোগ উঠে, তাদের সম্মেলনে কার্যক্রম থেকে সরিয়ে দিতে নির্দেশনা দেন। এ ক্ষেত্রে প্রস্তুতি কমিটি করে করে সম্মেলনে শেষ করার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য সচিবালয়ের ভেতরে শ্রম মন্ত্রণালয়ে শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক একটি সংগঠনের অফিস রয়েছে জানিয়ে বলেন, এটা ঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কেন সচিবালয়ে থাকবে? শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই শ্রমিক নেতা বলেন, আমি কিছুই জানি না। আমি তো দাওয়াতই পাই না।

সূত্রে জানা গেছে, দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে তৃণমূলের আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সমন্বয়ের কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হচ্ছে, কিন্তু সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন হচ্ছে না, এতে আমাদের তৃণমূলের সব সংগঠনকে নিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিভাগওয়ারি আটটি কমিটি রয়েছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনের বিষয়েও তারা দেখভাল করবেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, দলীয় সভাপতি তার বক্তব্যে নির্ধারিত সময়ে জাতীয় সম্মেলনের কথা বললেও, সম্মেলনের তারিখ কিংবা সম্মেলনকে ঘিরে উপকমিটির বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা দেননি। এতে করে কেন্দ্রীয় নেতারা অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছেন।