প্রায় ১০০ বছর আগে সৌদি আরবের নাগরিকরা দেশটির পবিত্র নগরী মক্কার গ্র্যান্ড মুফতির ঈদের ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতেন। তখন বড় এই দেশটিতে রেডিও অথবা টেলিগ্রাফও ছিল না। এই খবর ছড়িয়ে দেওয়ার একমাত্র উপায় ছিল উটের পিঠে চেপে বসে গ্রামের পর গ্রামে যাওয়া এবং যত বেশি সম্ভব মানুষকে জানানো।
তবে কখনও কখনও সব গ্রামে পৌঁছানো সম্ভব হতো না বার্তাবাহকদের। যে কারণে অনেক গ্রামে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ উদযাপন করা হতো। সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়ার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী খালিদ আল-জাক বলেন, ‘অতীতে প্রতিটি গ্রামে ঈদের নিজস্ব দিন ছিল, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। গ্রীষ্মকালে গ্রাম থেকে গ্রামের পার্থক্য কখনও কখনও ৪ দিন ছাড়িয়ে যেত।’
তিনি বলেন, ‘কখনও কখনও গ্রীষ্মকালে ঈদ পড়লে, উট আরোহীদের চলাফেরা এবং ঈদের খবর ছড়িয়ে দেওয়া বেশি কঠিন হয়ে পড়তো।’
তবে রেডিও আসার সাথে সাথে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ উদযাপন কমে যায়। যদিও রেডিও সম্প্রচার শুধুমাত্র প্রধান প্রধান এলাকাগুলোতে সচল ছিল। রেডিও আসার পরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে উট আরোহীদের মাধ্যমে ঈদের খবর ছড়িয়ে দেওয়া হতো, বলেছেন খালিদ আল-জাক।
তিন বলেন, গ্রাম এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে একজন মুতাওয়া (ধর্মীয় নেতা) থাকতেন; তারাই একমাত্র ব্যক্তি যারা দিনের হিসেবে করতেন এবং নতুন চাঁদ দেখতে অসুবিধা হওয়া সত্ত্বেও ঈদের ঘোষণা দিতেন।
এখন ঈদের চাঁদ দেখার জন্য মানুষ টেলিস্কোপ ব্যবহার করতে পারলেও আগের দিনে আকাশে স্বল্প দূরত্ব পর্যন্ত দেখার জন্য যন্ত্রও পাওয়া যেত না।
ঈদের চাঁদ দেখতে না পাওয়া পর্যন্ত রমজান মাসে রোজা রাখেন মুসলমানরা। শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ দেখার পরদিন মুসলিমরা পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন। চাঁদ দেখার সাথে সাথেই বিশ্বজুড়ে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।
জাক বলেন, সৌদি আরবে রেডিও সম্প্রচার অনুমোদনের পেছনে মূল কারণই ছিল ঈদের খবর সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া। পরবর্তীতে মানুষের মাঝে এটি যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে। যদিও সেই সময় প্রত্যেকের কাছে এই মাধ্যম সহজলভ্য ছিল না।
সৌদি আরবীয় ঐতিহ্যবিষয়ক গবেষক সুলেইমান আল-ফায়েজ আল-আরাবিয়াকে বলেন, ঈদ উদযাপনে বিলম্ব নিয়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় অনেক রকমের গল্প আছে। কারণ তখন যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল টেলিগ্রাফ।
এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে বার্তাবাহককে পাঠিয়ে ঈদের খবর পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় কাসিমের পুরনো একটি মজার গল্প বলেছেন আল-ফায়েজ। তিনি বলেন, বার্তাবাহক কোনও গ্রামে গিয়ে দেখছেন লোকজন ঈদ উদযাপন করছেন। পরে তাকেও ঈদ উদযাপনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাতেন গ্রামের বাসিন্দারা।
পরের দিন যখন নিজের গ্রামে ফিরে আসেন, তখন তিনি জানতে পারেন তার গ্রামের লোকজন এখনও উপবাস করছেন। বার্তাবাহককে পরপর দু’দিন ঈদ উদযাপন করতে হতো।