মাহফুজ আনাম জেমস। উপমহাদেশের সেরা রকস্টারদের একজন। ‘ভিগি ভিগি’ দিয়ে মাত করেছেন বলিউড, এরপর চাল চালে, আলবিদা মাত করেছে কোটি কোটি শ্রোতাপ্রেমীকে। এই সময়ে বলিউডের অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেতা বরুণ ধাওয়ান। তাকে গত বছর একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রশ্নটা ছিল, আপনার বলিউডের সবচেয়ে পছন্দের গান কোনটি? এর উত্তরে বরুণ বলেছিলেন, ভিগি ভিগি, জেমস।
২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউডের ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমার এই গান মাসেরও বেশি সময় তা বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। সেই জেমস হুট করে বলিউড থেকে সরে গেলেন কেন? এর কারণ কেউ জানত না। অবশেষে সে প্রশ্নের উত্তর দিলেন গত শুক্রবার, রাজধানীর গুলশান ক্লাবে।
বলিউডে স্থায়ী হননি কেন? এই প্রশ্নের জবাবে জেমস বলেন, ‘বলিউডে নিয়মিত গান করতে চাইলে সেখানে থাকতে হতো আমাকে। আমি দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না, থাকতে চাই না। এটা সম্ভব না আমার পক্ষে। আমি এই দেশে জন্মে অনেক সম্মান ও ভালোবাসা পেয়েছি। এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। ‘
আড্ডার শুরুতেই দিলেন নতুন গানের খবর। আসছে চাঁদরাতে বসুন্ধরা ডিজিটালে শোনা যাবে তার গান। শুধু গান নয়, ভিডিওচিত্রে দেখাও যাবে। গানের শিরোনাম ‘আই লাভ ইউ’। নিজেই লিখেছেন, সুর করেছেন। আর ভিডিও বানিয়েছেন শাহরিয়ার পলক। জেমসের ভাষ্য, ‘গানটি আমাকে যারা ভালোবাসেন, আমার গান শুনতে যারা মাঠে-ময়দানে যান, সেইসব ভালোবাসার মানুষের জন্য। ‘
‘বহুদিন পর নতুন গান বাঁধলাম। তবে এইবার গানটির বিষয় নির্বাচন একেবারেই ভিন্নতর। গানটি আমি আমার ভক্তদের উদ্দেশ করে বেঁধেছি, সুর করেছি, কম্পোজিশন করেছি। এর বিষয়বৈচিত্র্যে ঠাঁই পেয়েছে দীর্ঘ চার দশক ধরে মঞ্চ কিংবা সর্বত্র আমার সঙ্গে ভক্তদের বয়ে চলা, অপরিসীম ভালোবাসার সম্পর্ক। এই গানটি ভক্তদের উদ্দেশে গেয়েছি এবং তাদেরই উৎসর্গ করেছি। ‘ বলছিলেন তিনি। প্রথমে মাত্র আড়াই মিনিটের বক্তব্য শেষ করে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।
একটা সময় ছিল ঈদসহ নানা উৎসবে প্রকাশ পেত জেমসের গান। অডিও ক্যাসেটের সেই অ্যালবামের সঙ্গে থাকত দারুণ সব কাভার এবং পোস্টার। সেই দিন গত হয়েছে অনেক বছর। এখন গান মানে একটা জিঙ্গেল। শুনতে হয় ইউটিউব বা অন্য কোনো অনলাইন মাধ্যমে। তাহলে ভক্তদের নতুন গানের তৃষ্ণা মিটলেও ‘গুরু’র ছবি বা পোস্টার জমিয়ে রাখার ক্ষুধা কি মিটবে?
জেমস বলেন, ‘এটা আসলেই দুঃখজনক। আমরা ওই সময়টা পার করে এসেছি। সব কিছু ডিজিটাল হয়ে গেছে। অ্যালবাম প্রকাশ বন্ধ হয়ে গেল। নিজেদের কাছে রেখে দেওয়ার মতো আর কিছুই নেই। তবে বসুন্ধরা ডিজিটাল চিন্তা করছে অ্যালবাম আকারে আমার গান বের করা যায় কি না। ‘
পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। ছোট থেকেই হয়তো বাউন্ডুলেপনা পেয়ে বসেছিল তাকে। উত্তরবঙ্গের এই ছেলে নওগাঁর পত্নীতলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী, সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় বাবার সঙ্গেই ঘুরে বেড়াতে হতো।
জেমসের মিউজিকজীবন শুরু আশির দশকের একেবারে শুরুতে, চট্টগ্রামে। বাবার চাকরিসূত্রে চট্টগ্রামে চলে যান। কিন্তু বাবা যখন ঢাকা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ডিরেক্টর জেনারেল হয়ে চলে আসেন। জেমস থেকে যান চট্টগ্রামে। আজিজ বোর্ডিংয়ের ‘বারো বাই বারো’র একটি ছোট্ট রুমে চলে সংগ্রামী জীবন। সামনের একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া আর সন্ধ্যায় চলে যেতেন আগ্রাবাদের হোটেলে।
‘৮৬ সালে ঢাকায় এসে প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ প্রকাশ করেন। এরপরই আসিফ ইকবালের লেখা ‘অনন্যা’ জেমসের প্রথম একক অ্যালবাম। যেটা বের হয় ১৯৮৭ সালে। যার প্রতিটি গানই অসাধরণ। বিশেষ করে ‘অনন্যা’ কিংবা ‘ওই দূর পাহাড়ে’ গানগুলো বুকের মাঝে সত্যিই কাঁপন জাগায়। তবে এই গান শুনে কারো পক্ষে ধারণা করা সম্ভব হবে না যে গানটি জেমস গাইছেন। তারপর ‘জেল থেকে বলছি’।