বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে কু’পিয়ে হ’ত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন। কারাগারে কেমন আছেন তিনি? বাবার দাবি, কারাগারে ভালো নেই মিন্নি। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ভালো আছে।
গত ৬ এপ্রিল মেয়ে মিন্নির সঙ্গে দেখা করেছেন বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। মোজাম্মেল জানিয়েছেন, তার (মিন্নি) শরীরে নানা ধরনের অসুখ বাসা বেঁধেছে। মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করলেও করোনার কারণে উচ্চ আদালতের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মামলার কার্যক্রমও বন্ধ। গত ৪ এপ্রিল আদালত খুলেছে। ঈদের পরে কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছেন মিন্নির ববা।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা শহরের সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কু’পিয়ে হ’ত্যা করা হয় শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। পরবর্তীতে মিন্নিই হয়ে যান মামলার অন্যতম আসামি। কারণ তার পরিকল্পনাতেই প্রেমিক নয়ন বন্ড হ’ত্যা করেছিলেন রিফাতকে। পরে ওই বছরের ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন নয়ন বন্ড।
রিফাত শরীফ হ’ত্যাকাণ্ডে করা মামলায় ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আদালতের আদেশের পর বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মিন্নিকে নেয়া হয় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে। সেখানে কনডেম সেলে অবস্থান করছেন মিন্নি।
নিম্ন আদালতের দেয়া মিন্নির মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে তার পরিবার। করোনার কারণে উচ্চ আদালত বন্ধ থাকায় আপিল শুনানি হয়নি। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বভাবিক হয়ে আসায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, ফলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আপিলের শুনানি হবে বলে আশা করেছেন তার বাবা ও জেল কর্তৃপক্ষ।
কারাগারের একটি সূত্র জানায়, কারাগারের কনডেম সেলে সুস্থ আছেন মিন্নি। কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা সাধারণত কনডেম সেলে একা থাকেন। কিন্তু কাশিমপুর মহিলা কারাগারে অতিরিক্ত কয়েদি থাকায় একটি কনডেম সেলে তিনজনকে রাখা হচ্ছে।
কারাসূত্রটি জানায়, প্রতি সপ্তাহে পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ আছে। মিন্নি পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন প্রতি সপ্তাহে।
মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কারাগারে মিন্নি ভালো নেই। সেখানে খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না। সব সময় অসুস্থ থাকে। তার শরীরে নানা অসুখ বাসা বেঁধেছে। অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে মিন্নি। কারাগারের খাবার, পানি, আবহওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না মিন্নি। ফলে কারাগারে তার খুব কষ্ট হচ্ছে।’
মোজাম্মেল বলেন, ওরতো আগে থেকেই দাঁতে সমস্যা রয়েছে। এছাড়াও তার শরীরের নানা ধরনের অসুখ রয়েছে। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার তিন থেকে চারদিনের মধ্যেই আমরা আপিল করেছি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরে গত ৪ এপ্রিল আদালত খুলেছে। হয়তো ঈদের পর এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হবে।’
এ ব্যাপারে কাশিমপুর মহিলা কারাগারের জেলার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কারাগারে মিন্নি ভালো আছে। তার দাঁতের সমস্যা ছিল। সেটার চিকিৎসা করানো হয়েছে। ফলে এখন তার কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।’ আলোচিত এই হ’ত্যাকাণ্ডে মিন্নি ছাড়াও অন্য যারা মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন তারা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, মো. রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় ও মো. হাসান। খালাস পেয়েছেন মো. মুসা, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর ও কামরুল হাসান সাইমুন নামে চারজন।
সূত্র : ঢাকাটাইমস