সোশ্যাল মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রশংসায় ভাসছেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন (পিপিএম)। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের সচেতনমুলক ভিডিও নিজের ফেসবুকে পোস্ট করার মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পান এই পুলিশ কর্মকর্তা। মাদক ও বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে জিরো টলারেঞ্ছ নীতি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের কারনে ব্যাপক প্রশংসিত হন ওসি মোহাম্মদ মহসীন। এর আগে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার ওসির দায়িত্ব পালনকালে, বিভিন্ন আলোচিত মামলার আসামীকে দ্রুত গ্রেফতার করে প্রথমবারের মত আলোচনায় আসেন, সেখানে সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয় এই পুলিশ অফিসার।
মহসীন আলীকে ফেসবুকে মাঝে মাঝে বিভিন্ন ধরণের ভিডিও পোস্ট করতে দেখা যায়, এগুলো করে সাধারন মানুষের কাছে যাওয়ায় চেষ্টা করেন তিনি। আইনী সেবাকে জনগণের হাতের নাগালে পোঁছে দিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ঘুষ ছাড়া আইনী সেবা কিভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার যায় সেই প্রত্যাশায় প্রতি মুহুতে কাজ করে যাচ্ছেন এই গুণি পুলিশ অফিসার। সম্প্রতি আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যনে ভাইরাল হন এই পুলিশ অফসার। চুয়াডাঙ্গার সদর থানা পুলিশের উদ্যোগে অসহায় মানুষদের মধ্যে বিনা মুল্যে ইফতারি-সাহরির ব্যাবস্থা করেন। পুলিশের এমন আচরনে খুশি এলাকার সকল শ্রেণি পেশার মানুষ।
চুয়াডাঙ্গার শামীম কবির নামের এক ব্যাক্তির সাথে কথা হয় বিডি২৪লাইভ ডটকম’র। তিনি বলেন, এমন একজন ওসি পেয়ে আমরা খুশি। কোন রকম ঘুষ, অনিয়ম, দালালি ছাড়াই আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সেবা পাচ্ছি। আমি পুলিশ দেখে আগে ভয় পেতাম, এখন আর পুলিশ দেখে ভয় লাগেনা। আমাদের ওসি স্যারের ব্যাবহারে আমরা মনে করি সে আমাদের ভাইয়ের মত। তিনি আমাদের এখানে যোগ দেওয়ার পর থেকে আমাদের এখানের সকল সেক্টরে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে মানুষের উপকার করছেন তিনি।
এ বিষয়ে বিডি২৪লাইভ’র সাথে কথা হয় ওসি মোহাম্মদ মহসীনের। আলাপচারিতায় তিনি বলেন, আমরা পুলিশের চাকরির পাশাপাশি মানবিক যখন যেটা মনে করি যে, এটা করা প্রয়োজন তখন সেটা করার চেষ্টা করি। যেন মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারি এবং সাধারণ মানুষের কাছে যেতে পারি। আমরা নীরবে স্বল্প-পরিসরে খাবার ও কাপড় দিয়ে কিছু অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করছি। এই মহৎ উদ্যোগের পিছনে সার্বিক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ভুমিকা রয়েছে। এই অর্জন আমি আমার বলতে চাইনা, আমাদের বলতে চাই, আমার টিমের বলতে চাই, পুলিশে আমি বলে কিছু নাই, সব কিছুই আমরা। এই মহৎ কাজের সকল খরচ বহন করে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। আমি শুধু উদ্যোগ গ্রহন করি, আমার মাথায় যখন ভালো কোন আইডিয়া আসে তখন ডিপার্টমেন্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করি । তারা সম্মতি দিলে আমরা সবাই মিলে এই কাজ গুলো করি।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার ভিডিও দেখে অনেকে উপকিত হয়। দেশ, বিদেশ বিভিন্ন জায়গায় থেকে ফোন আসে মেসেজ পাই। তারা ধন্যবাদ জানাই এজন্য আরও কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। আমরা বিট পুলিশিং, কমউনিটি পুলিশিংসহ বিভিন্ন সচেতন মুলক প্রচারণা চালিয়ে থাকি। কিন্তু, এর মাধ্যমে একশো, দুইশো, পাঁচ হাজার, এর বেশি মানুষকে সেবার আওতায় আনতে পারি না। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভালো কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করি। আমার ভিডিও দেখে যদি অল্প কিছু মানুষ সচেতন হয় তাদের উপকারে আসে সেটাতো আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।
তিনি আরও বলেন, অনেক পুলিশ অফিসার রয়েছে যারা আমার থেকেও বেশি ভালো কাজ করে। এগুলো মিডিয়ায় আসেনা তাই সবাই জানতে পারেনা। পুলিশের উপর সাধারন মানুষের যে খারাপ ধারাপ ধারনা রয়েছে সেগুলো পরিবর্তনের লক্ষ্য আমরা করছি। আমি মনে করি, সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পুলিশের ভালো কাজগুলো তুলে ধরা উচিত। আমরা যদি মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারি, তাহলে মানুষ আমাদের কাছে সেবা নেওয়ার জন্য আসবে।
এর আগে, চলন্ত গাড়িতে মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামীদের গ্রেফতার করে ব্যাপক আলোচিত হন। কতোয়ালি থানায় কর্মরতকালে সব থেকে বেশি প্রশংশিত হন ওসি মহসিন আলী। সে সময় মাদক ও বাল্যবিবাহ কঠোর হস্থে দমন করেন। স্কুলের আশে পাশে থানা এলাকায় ও শহরে ব্যানার লাগিয়ে সচেতন করেন মাদক কারবারিদের। সেই সাথে তুলে ধরেন বাল্যবিবাহ’র নেতিবাচক দিকগুলো। এছাড়াও ১৫ মামলার আসামীকে পাখি আক্তার, ২১ মামলার আসামী জুলেখা খাতুন, ৯ মামলার আসামী খালেদা ও ৭ মামলার আসামী রহিমা খাতুনসহ অনেক নারীকে ফিরিয়ে নিয়ে এনেছিলো স্বাভাবিক জীবনে।
চাকরি জীবনে এসব ভুমিকা রাখার কারনে, প্রথম বারের মতো ২০১৬ সাল থেকে চালু হওয়া ‘পুলিশ উইমেন অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’ পুরুস্কারে ভূষিত হন। ২০১৯ সালের ২৭ জুন মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ওসি মুহাম্মমদ মহসীনের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন।