দীর্ঘ ১৭ বছরের সংসার জীবন অতিবাহিত করেছিলেন শাহানুর ইসলাম ও আকতারা বানু দম্পতি। তাদের তিন সন্তানও রয়েছে। কিন্তু গত ৬ মাস আগে দাম্পত্য কলহের জেরে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। দুই কন্যাকে নিয়ে আকতারা বানু চলে যায় বাবার বাড়ি। আর ছেলে থেকে যায় বাবার সাথে। অবশেষে তাদের ভাঙা সংসার জোড়া লাগালেন আদালত। রবিবার (২৪ এপ্রিল) পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মতিউর রহমানের হস্তক্ষেপে বিচ্ছেদ থেকে মুক্তি পান ওই দম্পতি। বিচারকের খাস কামরায় মৌলভী ডেকে দুই জন আইনজীবী এবং পরিবারের সদস্যদের সামনে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক এক হাজার টাকা নগদ দেনমোহরানায় তাদের পুনরায় বিয়ে পড়ানো হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের বারপাটিয়া এলাকার কৃষক শাহানুর ইসলাম। তিনি দাম্পত্য কলহের জেরে প্রায় ছয় মাস আগে স্ত্রী আকতারা বানুকে তালাক দিয়েছিলেন। তবে বিবাহবিচ্ছেদের পর বাবা-মা দুজনেই বিপাকে পড়েন তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে। এদিকে স্বামীর বিরুদ্ধে গত ৩০ মার্চ আদালতে যৌতুকের দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন স্ত্রী আকতারা বানু। মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযক্তের নামে সমন জারি করে আদালত।
ওই মামলায় রোববার আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করেন শাহানুর। তার প্রস্তুতি ছিল আদালতেই দেনমোহরের এক লাখ এক হাজার টাকা পরিশোধ করে দিবেন স্ত্রীকে। কারাগারে গেলেও স্ত্রীর সঙ্গে তিনি আর সংসার করবেন না। তবে আদালতের এজলাসে উপস্থিতিরি পর ঘটে গেল নাটকীয় ঘটনা। আদালতে অন্যদের সঙ্গে তাদের তিন সন্তানও উপস্থিত হয়েছিলেন। সন্তানদের দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তাদের বাবা-মা। জামিন আবেদনের শুনানির সময় বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান তিন সন্তানের দিকে চেয়ে তাদের কলহ ভুলে সংসারে ফেরার অনুরোধ জানান। কিছুক্ষণ চিন্তার এক পর্যায়ে দুজনেই সংসারে ফিরতে সম্মত হন।
এরপর বিচারকের খাস কামরায় মৌলানা ডেকে দুই আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক এক হাজার টাকা নগদ দেনমহরে তাদের আবারো বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে পড়ান আদালত মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল খালেক। আপোষনামা দাখিল করার পর আইনী প্রক্রিয়া শেষে তিন সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন ওই দম্পতি। এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী মকবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরাও চেয়েছিলাম তাদের সংসারটি টিকে থাকুক। বিচারক মহোদয় আমাদের সেই সুযোগটি করে দিয়েছেন।
আসামী পক্ষের আইনজীবী হাজিজুর রহমান বলেন, খুব সামান্য বিষয়েই তালাক দিয়েছিলেন শাহানুর। বিচারকের সঙ্গে আমরাও তাদের সংসারে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাই। এই বিচারে একটি সংসার রক্ষা পেলো। এ ঘটনায় এক দৃষ্টান্ত নজির স্থাপন করেছেন বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান।