নাহিদ হত্যায় ঢাকা কলেজের ৬ ছাত্র শনাক্ত

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের দোকান কর্মচারীদের সংঘর্ষের সময় ডেলিভারিম্যান নাহিদকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যায় জড়িত ছয় ছাত্রকে শনাক্ত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। বর্তমানে তাদের ধরার চেষ্টা করছে পুলিশ। এছাড়া ভিডিও ফুটেজ দেখে অন্যদেরও শনাক্ত করা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন সোমবার জানিয়েছেন, তারা সবাই ঢাকা কলেজের। ঘটনার সময় কয়েকজন হেলমেট পরা ছিল। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। অবশ্য প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভিডিও বিশ্লেষণ করে কয়েকজনের নাম ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমের খবরে এসেছে। তারা সবাই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই এখন। ২০১৬ সালে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলও তারা আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। কলেজের ছাত্রলীগ এখন কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মইনুল হোসেন সোমবার জানান, শনাক্ত হয়েছে এমন কোনো ছাত্রের ব্যাপারে তথ্য জানতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কোন সদস্য তার কাছে আসেননি, জানতেও চাননি।

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ মইনুল হোসেন বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কেউ কোন শিক্ষার্থী বিষয়ে জানতে চাইলে সহায়তা করা হবে।” কোনো শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছে- এমন তথ্যও নেই জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, “রোববার ছাত্রাবাসে গোয়েন্দা পুলিশ আলামত উদ্ধারের জন্য অভিযান চালায়। তারা একজনকে নিয়েছিল, পরে ছেড়ে দিয়েছে তবে তার মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে।”

এরমধ্যে নিহত নাহিদকে কুপিয়ে জখমকারী ইমনকে আটক করা হয়েছে। হেলমেট পরিহিত এ গ্রুপের সবাই ছিলেন হামলার সম্মুখভাগে। এছাড়া ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ধারালো অস্ত্র নিয়ে সরাসরি হামলায় অংশগ্রহণকারী আরও সাতজনের পরিচয় নিশ্চিতের পথে রয়েছেন তদন্তকারীরা। তিন স্তরে অবস্থান নিয়ে হামলা পরিচালনাকারীদের সামনের সারিতে ছিলেন অস্ত্রধারীরা। সেখানে ছিল ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপের সদস্য। গোয়েন্দাদের হাতে থাকা বেশিরভাগ ফুটেজে তাদের ছবিই এসেছে। তাদের পরের স্তরেই ছিল দেশীয় অস্ত্রসহ থাকা আরেকটি দল।

এ দলের ছয়জনকে শনিবার রাতে এবং রোববার সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিট তাদের হেফাজতে নিয়েছে। ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী চার শীর্ষ নেতাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সংঘর্ষের ওই মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রোববার ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাসে অভিযান চালায়। তবে সেখান থেকে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

মঙ্গলবার সংঘর্ষের সময় কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একই ঘটনায় নিহত হন দোকানকর্মী মোহাম্মদ মুরসালিন। দুই হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলা দুটির তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের পাশাপাশি র‌্যাব ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে। তদন্তকারী সূত্রগুলো বলছে, সংঘর্ষের পর থেকেই ভিডিও ফুটেজগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করছিল তারা। নজরদারিতে রেখেছিল হামলায় অংশগ্রহণকারীদের।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে নাহিদকে কোপানো ইমনসহ কয়েকজকে আটক করা হয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছুই জানাননি তারা। আটককৃতদের নাম প্রকাশ করলে তাদের সহযোগীরা পালিয়ে যেতে পারেন-এমন আশঙ্কায় এখনই নাম প্রকাশ করতে চান না তারা।

ইতোমধ্যে সেদিনের ঘটনায় জড়িতরা গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য তাদের কয়েকজন চুল কেটে ন্যাড়া হয়ে, দাঁড়ি রেখে, চোখে গ্লাস পরে, নিয়মিত পাঞ্জাবি পরে আত্মগোপনের চেষ্টা করছেন। আটক ইমনও গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাকটিভেটেড করে, মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান গোয়েন্দারা।