রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উভয়পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে সেখানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই ব্যবসায়ী। এছাড়া পুলিশের ছোঁড়া রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থী। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে উত্তপ্ত এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ‘কথা-কাটাকাটির জেরে সংঘর্ষের সূত্রপাত’ বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা পোস্টের ঢাকা কলেজ প্রতিবেদক।
সংঘর্ষ চলাকালীন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট ও ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান নেন। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে অবস্থান নেন। তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হারুন-অর রশিদ ও অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। রাত পৌনে ১টার দিকে যোগ দেয় অতিরিক্ত পুলিশ। তারা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ১৫-২০ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের রাবার বুলেটও নিক্ষেপ করতে দেখা যায়।
রাত ৩টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সংঘর্ষের জেরে মিরপুর রোডের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষের কারণ সম্পর্কে নিউমার্কেট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাহেব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির জেরে ঘটনার সূত্রপাত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।’
দুই ব্যবসায়ী ও দুই শিক্ষার্থী আহত
ঢাকা পোস্টের ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রতিবেদক জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় দুই ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। এছাড়া পুলিশের ছোঁড়া রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থী। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
রাত আড়াইটার দিকে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। আহত দুই শিক্ষার্থী হলেন- মোশাররফ হাজারি (২৪) ও রজব রহমান (২৭)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে মোশারফ হোসেন বুলেটবিদ্ধ হন। অন্যদিকে পুলিশের ছোঁড়া টিয়ার শেল রজবের বুকে লাগে।
আহতদের মধ্যে মোশাররফের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আইসিইউতে নিতে বলেছে চিকিৎসক— বলেন ওই শিক্ষার্থী।
থমথমে অবস্থা
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) শরীফ মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ৩টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও নিউমার্কেট এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থান করে পুলিশের গুলি ছোঁড়ার প্রতিবাদ করছেন। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা ইস্টার্ন-মল্লিকা মার্কেটের কাছে অবস্থান নিয়েছেন।
ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ সদস্যও ঘটনাস্থলে সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।
সংঘর্ষের সময় রাস্তার দুই পাশে রাখা একাধিক মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেগুলো জ্বলন্ত অবস্থায় দেখা যায়। কে বা কারা মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে তা জানা যায়নি। এছাড়া পুরো রাস্তাজুড়ে ইটের টুকরা ও কাঁচ ভাঙা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়।