চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. লিটন মিয়ার সামনেই তাঁর ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন সন্ত্রাসীরা। বুধবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে সদর উপজেলার মিরকাদিমের লঞ্চঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এলাকায় ইজারাসহ চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে পূর্ব বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে জানায় এলাকাবাসী। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।
নিহত যুবকের নাম ঝলক (২২) । তিনি সরকারি হরগঙ্গা কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, মিরকাদিম লঞ্চঘাট এলাকায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছিলেন পৌরসভার নৈদিঘিরপার এলাকার শরিয়তউল্লাহ মুন্সীর ছেলে সন্ত্রাসী জিল্লুর ছোট ভাই মাসুদ ও ভাতিজা মমিন। তাঁদের চাঁদাবাজিতে বাধা দেন কাউন্সিলর মো. লিটন। ওই ঘটনার জের ধরে লিটনের সামনেই তাঁর ছেলে ঝলককে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন মাসুদ ও মমিন। ঝলককে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে স্বজনরা ভিড় জমায় মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। আত্মীয়-স্বজন আহাজারি করে বলছিল, ‘ঝলক ভালো ছেলে। ওর বিরুদ্ধে কোনো বদনাম বা কোনো প্রকার অভিযোগ নাই। নিরীহ ছেলেটাকে ওরা মাইরা ফালাইল। ওগোর বিচার চাই, ফাঁসি চাই। ’
কাউন্সিলর লিটন বলেন, ‘মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র হাজি আব্দুস সালামের ছেলে মানিকের পাঠানো গুণ্ডারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। ’ তিনি জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছে অভিযোগ করেন, মেয়রপুত্র মানিক মিরকাদিম পৌরসভার লঞ্চঘাট এলাকায় অবৈধভাবে চাঁদা তুলছেন। এ ঘটনা তিনি মেয়রকে জানান। মেয়র লিটনকে মানিকের ফোন নম্বর দিয়ে বলেন, লিটন যেন মানিককে ডেকে বিষয়টি জানেন এবং তাঁর ছেলেকে এ ধরনের চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়াতে নিষেধ করেন।
লিটন বলেন,‘খবর পাই লঞ্চঘাটে ২০০ টাকা করে চাঁদা তুলছে। পরে আমার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আমি লঞ্চঘাটে যাই। আমি সেখানে গিয়ে চাঁদাবাজদের চাঁদা তুলতে বারণ করি এবং বিষয়টি নিয়ে বসতে বলি। যদি তারা কোনো ডাক বা টেন্ডার এনে থাকে, তবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সহনশীল বা সরকারের ধার্য করা টাকা আদায় করতে হবে বলে জানাই। কারণ ২০০ টাকা কোনোভাবেই হতে পারে না। আমি বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আমাকে বিষয়টি দেখার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। জনগণ এ নিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছিল। আমি ঘটনাস্থল থেকে মেয়র সাহেবের ছেলেকে ফোন দিলে সে ফোন না ধরে গুণ্ডা পাঠিয়ে দেয়। সন্ত্রাসী মাসুদ ও মমিন আমার সামনেই আমার ছেলের পেটে ধারালো অস্ত্র ঢুকিয়ে দেয় এবং রামদা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। ’
নিহতের চাচি সাহানুর বেগম (৪০) বলেন, ‘ওর বাপে কমিশনার হইছে। এর আগেও মারার চেষ্টা করছে। জিল্লু, মানিক, মাসুদরা মারছে। ঝলক জীবনে কারো সঙ্গে মারামারি করে নাই। ওর বাপেও কারো সঙ্গে মারামারি করে নাই। ডাকাতরা আমার মানিকরে মাইরা লাইছে। ’ ঝলকের বন্ধু সম্পদ বলেন, ‘ঘটনার সময় ঝলক আর আমি একসঙ্গে ছিলাম। জিল্লু খেয়াঘাটে চাঁদা তুললে ঝলকের বাবা তাতে বাধা দেন। এটাই ঝলকের জন্য কাল হয়েছে। জিল্লু মাসুদকে বৈঠা নিয়ে আসতে বলে। মাসুদ এসেই চাক্কু মারে। ’
নিহতের ফুফু বিউটি বেগম (৪৫) বলেন, ‘জিল্লু, মাসুদ ও রবিন হামলা করে মানিকের নেতৃত্বে। আমরা হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’সদর থানার ওসি (তদন্ত) রাজীব খান বলেন, মিরকাদিম লঞ্চঘাটের ইজারাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ। এরই মধ্যে তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।