প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে টিএসসিতে নামাজ আদায় ছাত্রীদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে জোহরের নামাজ আদায় করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। মঙ্গলবার দুপুরের পর নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থানের এক পাশে সালাত আদায় করেন ছাত্রীরা।

এর আগে ছেলেদের নামাজের স্থানের এক পাশে পর্দা দিয়ে ছাত্রীরা তাদের জন্য নামাজের স্থান তৈরি করে নেন। পরে টিএসসির পরিচালক সৈয়দ আলী আকবরসহ অন্য কর্মকর্তারা ছাত্রীদের নামাজ পড়তে বাধা দেন। বিষয়টি নিয়ে সেসময় উত্তেজনা দেখা দেয়। সৈয়দ আলী আকবর বলেন, টিএসসিতে ছাত্রীদের নামাজ পড়ার বিষয়ে প্রশাসন এখনো অনুমতি দেয়নি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, টিএসসিতে ছেলেদের জন্য নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকলেও মেয়েদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ বিভিন্ন কর্মসূচিসহ নানাবিধ কারণে ছাত্রীরাও টিএসসিতে অবস্থান করেন। এছাড়াও রমজান মাসে টিএসসিভিত্তিক সংগঠনগুলো এবং বিভিন্ন জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি ইফতার কর্মসূচি দিয়ে থাকে। কিন্তু ইফতারের পরে নামাজের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক ছাত্রী এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হন।

এদিকে ছাত্রীদের নামাজ আদায় করাকে কেন্দ্র করে টিএসসির ভেতরের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ঘটনাস্থলে টিএসসির উপদেষ্টা ড. শিকদার মনোয়ার মুর্শেদের নেতৃত্বে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সৈয়দ আলী আকবর, উপ-পরিচালক ফারজানা বাসারসহ কয়েকজন কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা আলোচনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ দিনের সময় চাওয়া হয়।

টিএসসির উপদেষ্টা ড. শিকদার মনোয়ার মুর্শেদ বলেন, তারা এখানে নিয়মের বাইরে গিয়ে জায়গা নির্ধারণ করে বসেছে। আমরা তাদেরকে অফিশিয়াল প্রসেসের জন্য ১০ দিনের সময় চেয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের কোনো কথা শুনছে না। এক্ষেত্রে আমরা এখন এখান থেকে চলে যাব। তারা এরপর এখানে কী করবে তার দায়-দায়িত্ব আমরা নিতে পারব না।

নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী স্মৃতি আফরোজ সুমি বলেন, ‘মেয়েদের নামাজের সমস্যার সমাধানের জন্য আমরা গত সপ্তাহে ভিসি স্যার বরাবর স্মারকলিপি দিই। ভিসি স্যারের মৌখিক সম্মতি পেলেও প্রশাসনের দিক থেকে পজিটিভ কোনো স্টেপ (পদক্ষেপ) না নেওয়ায় আমরা আজ ছেলেদের নামাজের পশ্চিমে যে জায়গাটা ফাঁকা পড়ে থাকে, সেখানে পর্দা দিয়ে ঘিরে নামাজের ব্যবস্থা করেছি এবং জোহরের সালাত আদায় করেছি।’

প্রশাসনের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী ১০ দিন অর্থাৎ ২২ তারিখের মধ্যে নামাজের স্থায়ী স্থান দেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করেন সুমি।

মেয়েদের নামাজের স্থানের ব্যবস্থা করতে সহযোগিতা করা ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে টিএসসিতে নামাজের সমস্যায় ভুগছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে শিক্ষার্থীরা। তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি ছাত্র সংগঠন হিসেবে আমরা মেয়েদের সঙ্গে থেকে স্মারকলিপি প্রদান এবং টিএসসিতে নামাজের স্থান স্থাপন পর্যন্ত সহযোগিতা করি। মেয়েরা জোহরের নামাজের মাধ্যমে টিএসসির নামাজের স্থানে সালাত আদায় শুরু করেন।’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ছাত্রীদের একটি পক্ষ টিএসসিতে ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদের জন্যও নামাজের স্থানের দাবি জানিয়ে ভিসির কাছে স্মারকলিপি দেয়। ভিসি ছাত্রীদের জন্য নামাজের স্থানের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাসও দেন। কিন্তু এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সূত্র : যুগান্তর