১৬ বছরের লড়াই, রায় নিয়েই ফিরলেন আইনজীবী মেয়ে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত অধ্যাপক তাহের হ’ত্যাকাণ্ডে দীর্ঘ ১৬ বছরের আইনি লড়াই শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন আইনজীবী সেগুফতা তাবাসসুম। তিনি ছিলেন তার বাবার খুনের মামলার একজন আইনজীবী।

দীর্ঘ ১৬ বছরের আইনি লড়াই শেষে গত মঙ্গলবার তিনি তার বাবা হ’ত্যার বিচারের চূড়ান্ত রায় পেয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে। তার দীর্ঘদিনের আইনি লড়াই স্বার্থক।

তাই রায় পরবর্তী তার মাকে নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে এসে কান্না লুকিয়ে রাখতে পারেননি। তার এই কান্নার মধ্যে যেমন আছে চাপা কষ্ট, তেমন আছে স্বপ্ন পূরণের স্বার্থকতার আনন্দ। তাবাসসুমের বাবা তাহের আহমেদ ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক। তার বাবাকে যখন হ’ত্যা করা হয় তখন তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী।

বাবা হ’ত্যার ঘটনায় প্রত্যাশিত বিচার নিশ্চিতের জন্য তিনি তার জীবনের লক্ষ্য পাল্টিয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে বিচারিক আদালতের রায় সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে গেলে সেখানে যাতে বাবা হ’ত্যার ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয় তার জন্য তিনি হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে অনুশীলন শুরু করেন।

গত মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাবাসসুমের বাবা হ’ত্যার বিচারের রায় প্রদান করেছে। অধ্যাপক তাহের আহমেদকে নৃশংসভাবে হ’ত্যার দায়ে দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং আরো দুই আসামিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ।

অবাক করা ব্যাপার হলো অধ্যাপক তাহের হ’ত্যা মামলার প্রধান আসামি তারই ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন যিনি কিনা একসময় অধ্যাপক তাহেরের ছাত্র ছিলেন।

শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির পথে বাধা হওয়ায় মহিউদ্দিন, তাহেরের বাসার কেয়ারটেকারকে সঙ্গে নিয়ে তাহেরকে খুন করে তার লাশ শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসার বাইরের ম্যানহোলে ফেলে দেয়।

বাবা হ’ত্যার বিচারের সঠিক রায় পেতে কন্যা তাবাসসুমের দীর্ঘ ১৬ বছরের ক্লান্তিহীন লড়াই বাংলাদেশের ইতিহাস অনন্য নজির হয়ে থাকবে।

বাবার প্রতি কতটুকু দায়বদ্ধতা থাকলে কিংবা বাবা হ’ত্যার বিচার পেতে কতটুকু দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হলে দীর্ঘদিনের আইনি জটিলতা ডিঙিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় তা করে দেখালেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা তাবাসসুম।