অভাবের সংসারে নিত্য টানাপড়েন, একবেলা খাবার জুটে তো অন্যবেলায় নয়। এমন পরিস্থিতিতে মা রাজিয়া বেগম গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন, অর্থ সঙ্কটে তার সুচিকিৎসাও হয়নি। রাজিয়ার ছোট্ট মেয়ে সাদিয়া আফরিন হারিসা জেদ ধরলেন, যে করেই বড় হয়ে ডাক্তার হবেই সে।
অবশেষে সেই হারিসার সুযোগ মিলল চিকিৎসাবিদ্যায়। বরিশালের বানারীপাড়ার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাদিয়া আফরিন হারিসা।
মঙ্গলবার প্রকাশিত ২০২১-২২ শিক্ষা বর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হয়েছে হারিসা। এতে ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নপত্রে হারিসা পেয়েছেন ৭৮ নম্বর। সব মিলিয়ে ৩০০ এর মধ্যে তার মোট নম্বর ২৭৮। হারিসা রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।
বানারীপাড়া পৌর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হারিসার বাবা মো. মিজানুর রহমান হাওলাদার ভ্যানে করে বানারীপাড়া পৌর শহরে সবজি বিক্রি করেন। মা রাজিয়া বেগম গৃহিনী। চার বোনের মধ্যে হারিসা তৃতীয়।
হারিসা বলেন, ‘২০১৪ সালে আমার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঠিকমতো তার চিকিৎসা করাতে পারিনি। আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তখন থেকেই মনে স্বপ্ন পুষেছিলাম পড়াশুনা করে ডাক্তার হবো। দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দেব।’
ভালো ফলাফলের বিষয়ে জানতে চাইলে হারিসা বলেন, ‘আমি টিউশনি করে মেডিকেল ভর্তি কোচিং করার জন্য টাকা জমিয়েছিলাম। আমার জমানো টাকায় কোচিং করেছি। তাছাড়া যেটুকু পড়াশুনা করতাম তা বুঝে-শুনে করতাম। মুখস্ত বিদ্যার ওপর ভর করিনি।’
বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি তে জিপিএ-৫ এবং বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইসএসসি পাস করেছেন হারিসা। পিএসসি ও জেএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন। বানারীপাড়া উপজেলায় প্রথম হয়েছেন পিএসসি পরীক্ষায়।
২০১৮ সালে তিনি জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক গল্প বলায় প্রথম স্থান অধিকার করে রাষ্ট্রপতি পদক পান। ২০১৭ সালে একই প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় হন উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায়।
সমকাল আয়োজিত জাতীয় স্কুল বিজ্ঞান বিতর্ক প্রতিযোগিতায় হারিসা ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয়েছিলেন।
হারিসার বাবা মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই হারিসা পড়াশুনার প্রতি অত্যন্ত মনোযোগী। আমি গরীব, ওর পড়াশুনার জন্য যথেষ্ট টাকা পয়সা খরচ করতে পারিনি। হারিসা একান্ত নিজের চেষ্টায় সাফল্য পেয়েছে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, হারিসা যেন একজন মানবিক চিকিৎসক হয়ে গরীবের সেবা করে’।
হারিসার মা রাজিয়া বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে কত কষ্ট করে পড়ালেখা করে মেডিকেলে চান্স পেল। কিন্তু এখন মেয়ের পড়াশোনার খরচ কিভাবে জোগাড় করব? আমার তো চিন্তা আরও বেড়ে গেল।’