বিনামূল্যে ব্যাগভর্তি বাজার পেয়ে খুশি নিম্ন আয়ের মানুষ

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। এমন পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

রোববার (৩ এপ্রিল) থেকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা আঠারোবাড়িতে রমজানের ফ্রি হাট কর্মসূচি চালু করেছে সংগঠনটি। থরে থরে সাজানো সবজি, মাছ, তেল, পেঁয়াজ, খেজুরসহ পছন্দমতো ১২টি পণ্য বিনামূল্যে নিতে পারছেন অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। টাকা ছাড়াই ব্যাগভর্তি এমন বাজার পেয়ে খুশি এসব মানুষ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটটি বসানো হয়েছে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ি ইউনিয়নের ইরা গ্যাস স্টেশন চত্বরে। সুন্দর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালনা করা হচ্ছে হাটের কার্যক্রম। আলাদা আলাদা স্টলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে আলু, চিচিঙ্গা, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, লাউ।

এ ছাড়া তেল, লবন, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ, খেজুর, মুড়ি এমনকি তাজা মাছও রয়েছে। আর এগুলো বিনামূল্যে অসহায় ব্যক্তিদের বাজারের ব্যাগে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সংকোচ থেকে যারা হাটে আসতে চান না, তাদের জন্য ফাউন্ডেশনের একটি ফোন নম্বর দেওয়া রয়েছে। ওই নম্বরে ফোন করা হলে স্বেচ্ছাসেবীরা পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন।

সহিলাটি গ্রামের আবুল কাসেম (৬০) নামে এক ব্যক্তি বলেন, বাজারে যে দাম, এই দামে এত কিছু আমার পক্ষে কিইন্যা খাওয়া সম্ভব না। আর তারা এতগুলো বাজার মাগনা দিল। রোজার মাসে খাওন লইয়া আর চিন্তা করুন লাগত না। আল্লাহ তাগরে আরও বেশি বেশি দেওয়ার তৌফিক দেক।

দিঘালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আছমা আক্তার (৪৫) বলেন, রোজার লাগি বাজার-সদাই করতাম পারিনাই। কিন্তু আল্লাহ এইবার যে ব্যাগ ভইরা মাগনা বাজার মিলায়া দিব, তা চিন্তাও করছি না। খুব আনন্দ লাগতাছে।

সমাজের ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে নেওয়া সহযোগিতার পাশাপাশি সংগঠনের সদস্যদের চাঁদার টাকায় তৃতীয় বছরের মতো চলছে এ কার্যক্রম।

রনি সরকার শুভ নামে সংগঠনের এক সদস্য বলেন, বর্তমানে বাজারের যে অবস্থা তাতে নিম্ন আয়ের মানুষদের নিত্যদিনের বাজার করা দুঃসাধ্য। সেজন্য আমরা বিত্তবানদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করে সেগুলো দিয়ে এই ফ্রি হাটের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এর মাধ্যমে বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ দুস্থ ও নিন্ম আয়ের মানুষদের মাঝে বিতরণ করতে পারছি।

শাহনাজ পারভীন নাবিলা নামে আরেক স্বেচ্ছাসেবী বলেন, আমরা যে হারে মানুষকে দিতে চাচ্ছি, আর্থিক সংকটে সে হারে দিতে পারছি না। তবে যতটুকু পারছি তৃপ্তি নিয়েই দিচ্ছি। আরেকটু বেশি সহযোগিতা পেলে আরও মানুষকে দিতে পারতাম। এই কাজটি দেখে যাতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয় ও এগিয়ে আসে সেটিই এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য।

এদিন সকালে ফ্রি হাটের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাফিজা জেসমিন, আঠারোবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুবের আলম কবীর রুপক, তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রথম দিনে এই সহায়তা পেয়েছেন ৪০০ মানুষ। পুরো রমজান জুড়ে প্রতি রোববার বসবে এই হাট। শেষ সপ্তাহের হাটটি হবে ঈদের হাট। সেই হাটে নতুন জামা-কাপড়, সেমাই-চিনি ও শিশুদের জন্য খেলনা বিনামূল্যে বিতরণ করবে সংগঠনটি।