আটা-ময়দা দিয়ে তৈরি হচ্ছিলো মোনাস-প্যানটোনিক্স ওষুধ

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিপুল পরিমাণ নকল প্যানটোনিক্স ২০ ও মোনাস ১০ ঔষধ এবং ঔষধ তৈরির পূর্ণাঙ্গ ডায়াস সেট উদ্ধারসহ ঘটনায় জড়িত ২ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলো নকল প্যানটোনিক্স ২০ ও মোনাস ১০ পাইকারী বিক্রেতা মোঃ আলী আক্কাস শেখ ও ওয়েস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস এর মালিক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ১০ লক্ষ ৩৪ হাজার ২৮০ পিস নকল প্যানটোনিক্স ২০ ট্যাবলেট, ১৮ হাজার পিস নকল মোনাস ১০ ট্যাবলেট, নকল প্যানটোনিক্স ২০ ট্যাবলেট তৈরির পূর্ণাঙ্গ ডায়াস সেট ও প্যানটোনিক্স ২০ ট্যাবলেট প্রিন্ট করা ৩৪ কেজি ফয়েল পেপার জব্দ করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় কোটি টাকা।

বুধবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর চকবাজার, ফকিরাপুল ও চুয়াডাঙ্গার দর্শণা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার ও নকল ঔষধ উদ্ধার করে ডিবি লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী জোনাল টিম। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বেলা ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, আমাদের ডিবির লালবাগ বিভাগের কোতায়ালী জোনাল টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩০ তারিখ চকবাজারের মদিনা চাঁন সরদার কোল্ড স্টোরেজ এর এ.জে.আর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি (কুরিয়ার সার্ভিস) থেকে ২ লক্ষ ১১ হাজার ৬৮০ পিস প্যানটোনিক্স ২০ ট্যাবলেট ও ১৮ হাজার পিস মোনাস ১০ ট্যাবলেট উদ্ধার করে যার গায়ে যথাক্রমে ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ, সাভার ম্যানুফ্যাকচারড বাই দ্য একমি ল্যাবরোটরিজ লি., ধুলিভিটা ধামরাই, ঢাকা, বাংলাদেশ লেখা রয়েছে।

এ ঔষধ সম্পর্কে বিক্রেতা মোঃ আলী আক্কাস শেখকে কাগজপত্র দেখাতে বললে সে বৈধ কোন কাগজ পত্র দেখাতে পারে নাই। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় নকল ওষধের মূল মালিক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় তার নকল ওষধ তৈরির একটি কারখানা আছে। পরবর্তী সময়ে তাকে নিয়ে ফকিরাপুলের আরামবাগ থেকে গিয়াস উদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শণা থানার পৌরসভার একটি বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ওয়েস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস নামে আয়ুর্বেদী ব্যবসার আড়ালে নকল প্যানটোনিক্স ২০, মোনাস ১০ ট্যাবলেটসহ আরো অন্যান্য ব্র্যান্ডের ঔষধ উৎপাদন করে থাকে। এসব নকল ঔষধ মূল ডিলার মোঃ আলী আক্কাস শেখ এর মাধ্যমে সিন্ডিকেট এর অন্যান্য সদস্যদের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে আসছে।

নকল ঔষধের ভয়াবহতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সকল ঔষধে কার্যকরী কোন উপাদান থাকে না। নন ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রেডের এসব কেমিক্যাল সেবনের ফলে মানুষের কিডনী, লিভার, হৃদযন্ত্র এবং শ্বাসতন্ত্রে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তিনি বলেন, রমজান ও তৎপরবর্তী ঈদকে কেন্দ্র করে এসব ভন্ড প্রতারকদের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। তাদেরকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ডিএমপির চকবাজার থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ডিএমপির গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ রাজীব আল মাসুদ, বিপিএম এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে কোতয়ালী জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ সাইফুল আলম মুজাহিদ এর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।