ক্যান্সারে হেরে গেলেন হাসপাতালে বিয়ে করা সেই ফাহমিদা

চট্টগ্রাম নগরীর মেডিকেল সেন্টারে বিয়ে করা সেই ফাহমিদা কামাল আর নেই ( ইন্না….. রাজেউন)। সোমবার সকাল ৭ টা ২৩ মিনিটে মেডিকেল সেন্টারে ক্যান্সারের কাছে হার মেনে ফাহমিদা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ফাহমিদার নানা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন সাকী। তার মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে সর্বত্র।

ফাহমিদার নানা সাইফুদ্দিন সাকী জানান, ফাহমিদাকে আর বাঁচানো গেল না। তার কপালে জুটল না সুখের সংসার। আজ বাদ আছর ফাহমিদার নিজবাড়ি দক্ষিণ বাকলিয়া হাজী আবদুস সালাম মাস্টারের বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। ফাহমিদার অকাল মৃত্যুতে নগরজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ফাহমিদা রাজি না থাকলেও গত ৯ মার্চ হাসপাতালের শয্যাতেই প্রিয়তমাকে বিয়ে করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন মাহমুদুল হাসান। সেই হাসপাতালেই চলে তাদের সুখের সংসার। মাঝে একদিন তারা গিয়েছিলেন বাসায়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফের হাসপাতালেই পেতেছেন তারা সংসার। কথা ছিল সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে নতুন করে সংসার শুরু করবেন ফাহমিদা ও মাহমুদুল। কিন্তু ক্যান্সারের কাছে হার মেনে না ফেরার দেশেই চলে গেলেন ফাহমিদা। পছন্দের মানুষটিকে নিয়ে সংসার করার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না ফাহমিদার। তার এমন মৃত্যুকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্বামী মাহমুদুল।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের এমন বিয়ে ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মাহমুদুল হাসানের ভালোবাসার এমন নজিরকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকে। এমন ঘটনাকে ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবেও মন্তব্য করছেন কেউ কেউ। অনেকে বলছেন চট্টগ্রামের কোনো হাসপাতালে এটিই প্রথম বিয়ের কোনো ঘটনা।

ফাহমিদা কামাল চট্টগ্রামের দক্ষিণ বাকলিয়ার চর চাক্তাই এলাকার বাসিন্দা। গত বছরের জানুয়ারি মাসে মেধাবী এই শিক্ষার্থী আক্রান্ত হন রেকটাম ক্যান্সারে। পরে মরণব্যাধি এই রোগ থেকে বাঁচতে লড়াই শুরু করে ফাহমিদা ও তার পরিবার এবং স্বজনরা। এরইমধ্যে দেশের পাশাপাশি ভারতে গিয়েও করিয়েছেন চিকিৎসা। কিন্তু কোনো চিকিৎসা কাজে আসেনি। ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতির বদলে আরও অবনতি হতে থাকে তার।

দিন দিন ফাহমিদার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চট্টগ্রামের তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শারীরিক এমন অবস্থার মধ্যেই ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন কক্সবাজারের চকরিয়ার সন্তান মাহমুদুল হাসান। তার এমন সিদ্ধান্তে অনেকটা হবাক হন সবাই।

চট্টগ্রামের দক্ষিণ বাকলিয়ার চর চাক্তাই এলাকার বাসিন্দা এসএম কামাল উদ্দিনের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে ফাহমিদা দ্বিতীয়। ২৬ বছর বয়সী ফাহমিদা নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রামের বেসরকারি চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকেও এমবিএ শেষ করেন।

৩০ বছর বয়সী মাহমুদুল হাসান কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালীর সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হকের ছেলে। ঢাকার নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করা মাহমুদুলের সঙ্গে ফাহমিদার পরিচয় হয় শিক্ষাজীবন থেকেই। দুই পরিবারই জানতেন তাদের সম্পর্কের বিষয়টি।