মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম ইবাদত তাহাজ্জুদ। এই নামাজ নেককারদের বৈশিষ্ট্য। মনের কুপ্রবৃত্তি দমনে এই নামাজ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য অধিক কার্যকর। ওই সময়ে পাঠ করা (কোরআন তিলাওয়াত ও জিকির) একেবারে যথার্থ। (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ০৬)
তাই মুমিনের উচিত, তাহাজ্জুদ পড়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। কিন্তু কেউ যদি রাতের শেষ ভাগে ওঠার ব্যাপারে পরিপূর্ণ নিশ্চিত না হয়, তবে তাদের জন্য তাহাজ্জুদের ফজিলত অর্জনের বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে, যদিও তা রাতের শেষ ভাগে বিছানা ত্যাগ করে নামাজ পড়ার সমতুল্য অবশ্যই হবে না। তবে তাহাজ্জুদের সওয়াব পাওয়ার আশা করা যাবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের সর্বোত্তম সময় রাতের শেষ প্রহরে ঘুম থেকে ওঠার পর হলেও এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত এই নামাজ পড়া যায় এবং তাহাজ্জুদের ফজিলত লাভ হয়। কেননা তাহাজ্জুদ নামাজের মূল সময় এশার নামাজের পর থেকেই শুরু হয়ে যায়, যদিও উত্তম সময় হলো ঘুম থেকে ওঠার পর। আমরা অনেকেই শেষ রাতে উঠতে না পারার কারণে তাহাজ্জুদের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বীয় উম্মতের এই দুর্বলতার প্রতি সদয় হয়ে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে ‘তোমরা এশার নামাজের পর শোয়ার আগেই তাহাজ্জুদের নিয়তে দু-চার রাকাত নামাজ পড়ে নেবে। ’
হাদিস শরিফে এসেছে, সাউবান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘‘রাত্রি জাগরণ কষ্টকর ও ভারী জিনিস, তাই তোমরা যখন (শোয়ার আগে) বিতর পড়বে, তখন দুই রাকাত (নফল) নামাজ পড়ে নেবে। পরে শেষ রাতে উঠতে পারলে ভালো, অন্যথায় এই দুই রাকাতই ‘কিয়ামুল লাইল’-এর ফজিলত লাভের উপায় হবে। ’’ (সুনানে দারেমি, হাদিস : ১৬৩৫; সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস : ১১০৬; তাহাবি, হাদিস : ২০১১)
এশার পর চার রাকাত নফলের বিশেষ সওয়াব রয়েছে। হাদিসে এসেছে, কাব (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ভালোভাবে অজু করে এশার জামাতে অংশগ্রহণ করবে, অতঃপর এশার নামাজের পর চার রাকাত (নফল) নামাজ পড়বে, যাতে কিরাত-রুকু-সেজদা সঠিকভাবে আদায় করবে, তার জন্য শবেকদরের মতো সওয়াব লেখা হবে। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ৪৯৫৫)
তা ছাড়া ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত প্রসিদ্ধ হাদিস, যেখানে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রাতের আমল প্রত্যক্ষ করার উদ্দেশে তাঁর খালা উম্মুল মুমিনিন মাইমুনা (রা.)-এর ঘরে রাতে মেহমান হয়েছিলেন, ওই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শোয়ার আগে চার রাকাত নফল নামাজ পড়ার আমলও প্রত্যক্ষ করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ১১৭)
তাই আমরা যারা অনেক চেষ্টা করেও রাতের শেষ ভাগে উঠতে পারি না, তাদের উচিত কমপক্ষে এশার সুন্নাতের সঙ্গে উল্লিখিত নফল নামাজগুলো পড়ে নেওয়া। ইনশাআল্লাহ এর বিনিময়ে মহান আল্লাহ আমাদের তাহাজ্জুদের ফজিলত দান করবেন। তবে আল্লাহর প্রেমে রাতের শেষ ভাগে বিছানা ত্যাগ করার মন-মানসিকতা, অভ্যাস ও পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদের মর্যাদা মহান আল্লাহর দরবারে বাড়িয়ে দেবে। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।