এইচএসসিতে পাস করে চমক দেখালেন সেই জেসমিন আক্তার। চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার করফুলেননেছা মহিলা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৪.৫৮ পেয়ে পাস করেছেন তিনি। তাই চোখেমুখে উচ্ছ্বাস আর আনন্দে ভাসছে তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু এমন ফলাফলে সন্তুষ্ট হতে পারেননি দরিদ্র ঘরের এই সন্তান।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ঠাকুরচর গ্রামে জেসমিন আক্তারের (১৯) বাড়ি। বাবা রফিকুল ইসলাম শারীরিক প্রতিবন্ধী। মা হালিমা খাতুন গৃহিণী। দরিদ্র অসহায় পরিবারের মেয়ে তিনি। ২০১৮ সালে উপজেলার ছেঙ্গারচর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসির পরীক্ষার্থী ছিলেন জেসমিন আক্তার। কিন্তু পরীক্ষার প্রবেশপত্র না পাওয়ায় ওই সময় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি তিনি। এতে রাগে ক্ষোভে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন জেসমিন আক্তার। কিন্তু তা রুখে দেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার।
নিরুদ্দেশ হওয়ার পথ থেকে ফিরিয়ে নেন তিনি। তারপর প্রতিবন্ধী বাবা রফিকুল ইসলাম এবং মা হালিমা খাতুনের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁদের মেয়ে জেসমিন আক্তারের পাশে দাঁড়ান তিনি। নতুন করে বিদ্যালয়ে ভর্তি এবং পরের বছর ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সব ব্যবস্থা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এতে জিপিএ ৪.২৮ পেয়ে পাস করেন জেসমিন আক্তার। ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার করফুলেননেছা মহিলা কলেজে।
এদিকে গ্রামের বাড়ি থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে নতুন করে আরেক যুদ্ধে নামেন জেসমিন আক্তার । কারণ এবার তাঁকে আরো ভালো ফলাফল করতে হবে। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় করোনা পরিস্থিতি। সেখানে থাকা-খাওয়া এবং অন্য সব ব্যবস্থা করে দেন সরকারি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার। শত বাধা পেরিয়ে অবশেষে জিপিএ ৪.৫৮ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন তিনি।
ভবিষ্যতে কী হতে চান, এমন এক প্রশ্নের জবাবে জেসমিন আক্তার বলেন, ‘প্রত্যাশিত ফলাফল করতে পারিনি। আরো ভালো করার দরকার ছিল। তার পরও চেষ্টা করব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্য কোনো মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন সুযোগ পাই। ‘
এদিকে জেসমিন আক্তারের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মতলব উত্তরের সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা, বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে কর্মরত জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব শারমিন আক্তার বলেন, ‘জেসমিন আক্তারের শিক্ষাজীবন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার পাশে থাকব আমরা। ‘
একই কথা জানান শারমিন আক্তারের স্বামী নাদিম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো কন্যাসন্তান নেই। তাই জেসমিনই আমাদের সন্তান। ‘