সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগসহ চলমান আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের সব দাবির কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং পর্যায়ক্রমে তা পূরণের আশ্বাস দেন। উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে আচার্যের (রাষ্ট্রপতি) সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান মন্ত্রী।
শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় সিলেট সার্কিট হাউজে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় সন্ধ্যায়। পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে ব্রিফ করেন। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, তিনি শিক্ষার্থীদের সব দাবির কথা শুনেছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া তার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে। বেশ কিছু দাবি ইতিমধ্যে পূরণ হয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিষয়টি আচার্যকে (রাষ্ট্রপতি) জানাবো। এ ব্যাপারে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাদের কথা বুঝতে চেষ্টা করেছি। তাদের যে দাবিগুলো আছে শিক্ষার মান, আবাসনের মান কীভাবে উন্নত করা যায় সে সংক্রান্ত তারা নিজেরাই চিন্তা করে বেশ কিছু প্রস্তাব দাঁড় করিয়েছে। আমরাই বলেছিলাম, তাদের ঠিক করতে। আমরা যে প্রস্তাবগুলো দেখলাম, তার মধ্যে বেশ কিছু ইতিমধ্যে পূরণ করা হয়ে গেছে। আরও যেগুলো আছে প্রায় সবগুলোই আমরা আশা করি পূরণ করতে পারবো। সে উদ্যোগ আমরা নেব।’
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উপাচার্যকে অপসরণের একটি দাবি তাদের ছিল। সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের যে বক্তব্য এবং কেন তারা এটি চায়, আমরা মনোযোগের সঙ্গে তাদের বক্তব্য শুনেছি। আমরা আচার্যকে অবহিত করবো, বাকি সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন।’
এর আগে শুক্রবার দুপুরে আন্দোলনকারীদের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল সার্কিট হাউসে যান। এ সময় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন মুহাইমিনুল বাশার রাজ (ফিজিক্স), ইয়াসির সরকার (ফিজিক্স), নাফিসা আনজুম (লোকপ্রশাসন), সাব্বির আহমেদ (লোকপ্রাশাসন), আশিক হোসাইন মারুফ (ওশেনোগ্রাফি), সাবরিনা শাহরিন রশীদ (ফিজিক্স), সুদীপ্ত ভাস্কর (ফিজিক্স), শাহরিয়ার আবেদীন (ফিজিক্স), আমেনা বেগম (সিভিল), মীর রানা (অর্থনীতি) এবং জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব।
গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। পরদিন রবিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
১৫ জানুয়ারি বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় শাবি কর্তৃপক্ষ।
তবে তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কিলোতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন শুরু করেন।
গত ২৬ জানুয়ারি সকালে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল অনশনরত ২৮ জন শিক্ষার্থীর অনশন ভাঙান। এরপর থেকে অহিংস আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে অবরোধ ও অনশন কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চালিয়ে আসছিলেন তারা। ১৪ দিন পর বুধবার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এই দুই দিন পরই সংকট নিরসনে সিলেট ছুটে গেলেন শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী।
সূত্র : ঢাকাটাইমস