অনেক পরিবারেই বউ–শাশুড়ির মধ্যে একটা ‘শীতল যুদ্ধ’ চলতে দখা যায়। কোনো একটা বিশেষ কারণে নয়, হয়তো ছোট্ট একটা ঘটনা থেকেই দিনের পর দিন সম্পর্কটা তিক্ত হতে থাকে। অথচ ওই শাশুড়ি যেমন নিজের সন্তানদের ভালোবাসেন, বউও তার বাবা–মাকে ভালোবাসেন। তাহলে শ্বশুরবাড়িতে এসে কেন পাল্টে যায় সেই রূপ!
এমনটা নয় যে একমাত্র পুত্রবধূরই দায়িত্ব শ্বশুরবাড়ির সবার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক তৈরি করা। কিন্তু কিছুটা দায়িত্ব তার দিক থেকেও থেকেই যায়। শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্কটা সহজ হয়ে গেলেই কিন্তু অনেকটা নিশ্চিন্ত হন মেয়েরা। স্নেহ, কর্তব্য, দায়িত্বপালনে গর্ভধারিণী মাকেও টেক্কা দিলেন ভারতের এক শাশুড়ি। তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছিল বিয়ে হওয়ার ছয় মাসের মাথায়।
পুত্রশোকাতুর মা এই পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়তে পারতেন। দুঃখের প্রকাশ করতে পারতেন সদ্য বিধবা পুত্রবধূর ওপর রাগ দেখিয়ে। যেমন অনেকেই করে থাকেন; কিন্তু তিনি তা করেননি। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় স্বামী মারা গেলে ভারতীয় সমাজে সদ্য বিধবার কপালে নানা ‘দুঃখ’ লেখা থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি।
২০১৬ সালের মে মাসে রাজস্থানে শিকরের কমলাদেবীর কনিষ্ঠপুত্র শুভমের সঙ্গে বিয়ে হয় সুনীতার। বিয়ের পরই স্বামী এমবিবিএস পড়তে চলে যান কিরগিজস্তানে। ওই বছরই নভেম্বর মাসে ব্রেনস্ট্রোকে মৃত্যু হয় শুভমের। সুনীতা তখন রাজস্থানে, শ্বশুরবাড়িতে। তার সঙ্গী এবং অভিভাবক বলতে শাশুড়ি কমলা দেবীই। সদ্য বিধবা তরুণীকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন কমলা।
সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা কমলা। পুত্রশোক সামলে পুত্রবধূর ভালোমন্দে মন দেন। সুনীতাকে তার পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে বলেন। শাশুড়ির উৎসাহেই সুনীতা তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন। পরে পুত্রবধূকে বিএড পড়ার জন্যও উৎসাহিত করেন কমলা। স্বামীকে হারানোর চার বছরের মধ্যে শিক্ষিকার চাকরিও পেয়ে যান সুনীতা।
প্রতিবেশীরা বলেন, সুনীতাকে প্রথম দিন থেকেই ঘরের লক্ষ্মী বলে ডাকতেন তার শাশুড়ি। ছেলের থেকেও বেশি ভালোবাসতেন বউমাকে। তবে মুখে বলা এবং কাজে করে দেখানোর মধ্যে এক কথা নয়; সহজও নয়। কমলা সেই কঠিন কাজ করে দেখিয়েছেন। কমলা সম্প্রতি পুত্রবধূর বিয়ে দিয়েছেন। ভোপালের মুকেশ নামে এক সরকারি হিসাবরক্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেন।
স্বাবলম্বী সুনীতার জন্য পাত্র পছন্দ করেছেন কমলা নিজেই। সাজিয়ে গুছিয়ে আত্মীয়স্বজনকে ডেকে বিয়েও দিয়েছেন। শ্বশুরবাড়িতেই বসেছে সুনীতার বিয়ের আসর। কন্যাদান করেছেন শাশুড়ি কমলা। কাণ্ড দেখে অবাক কমলার পরিচিতরা। শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়েছে অনেকেরই। আর এই ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হতেই তা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রশংসায় ভাঁসতে থাকেন শ্বাশুড়ি কমলা। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া