চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার উদ্যোগে পৃথিবীতেই বানানো হয়েছে বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম চাঁদ। চীনা দৈনিক ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ জানিয়েছে, এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে প্রকল্পের কর্ণধার ‘চায়না ইউনিভার্সিটি অব মাইনিং অ্যান্ড টেকনোলজি’-র অধ্যাপক লি রুইলিনের জন্য। মূলত তারই মস্তিষ্কপ্রসূত এই কৃত্রিম চাঁদ। লক্ষ্য, চাঁদে মানুষ নামানোর প্রস্তুতি শুরু করা।
ভরশূন্য অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ থাকতে গেলে কী কী অসুবিধা হতে পারে পৃথিবীর উপগ্রহে, বায়ুমণ্ডল নেই বলে সূর্য থেকে প্রতি মুহূর্তে ছুটে আসা হানাদার ও মহাজাগতিক রশ্মির ঝাপটা থেকে কীভাবে বাঁচানো যেতে পারে চাঁদের মাটিতে নামা নভোচারীদের, তা পৃথিবীর মাটিতেই আগাম বুঝে নিতে এই কৃত্রিম চাঁদ বানানো হয়েছে। যে চাঁদে আগেভাগেই জেনে-বুঝে নেওয়া সম্ভব হতে পারে কোথায় কোথায় বরফের নিচে এখনো রয়েছে পানি।
লি চীনের দৈনিকটিকে বলেছেন, এর ফলে গবেষণা ও অন্যান্য কাজে আগামী দিনে চাঁদের কোথায় নেমে দীর্ঘ দিন থাকতে পারবেন মহাকাশচারীরা, তা পৃথিবী থেকেই বুঝে ফেলা সম্ভব হবে। উপগ্রহ, ল্যান্ডার, রোভার পাঠিয়ে আর চাঁদের ‘মন’ বোঝার চেষ্টায় ঘাম ঝরাতে হবে না।
খুব সামান্য মাধ্যাকর্ষণের অভিজ্ঞতা বিমানেও হয়, হয় ড্রপ টাওয়ারেও। কিন্তু তা খুবই অল্প সময়ের জন্য। চীনের বানানো চাঁদে ভরশূন্য অবস্থায় থাকা যাবে যতক্ষণ ইচ্ছা। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, চাঁদে খুব সামান্য হলেও আছে মাধ্যাকর্ষণের টান। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের ছয় ভাগের মাত্র এক ভাগ। যাকে ভরশূন্য অবস্থাই বলা যায়।
চীনের বানানো কৃত্রিম চাঁদের ব্যাস অবশ্য আসল চাঁদের মতো নয়। অনেকটাই কম। তবে এই কৃত্রিম চাঁদের পিঠ ভরিয়ে দেওয়া থাকবে আসল চাঁদের পাথর আর ধুলোবালি দিয়ে। যার ভার নেই বললেই হয়। বেইজিং ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে, আগামী দশকে চাঁদে মহাকাশচারী পাঠাবে চীন। চাঁদের কক্ষপথে পাঠানো হবে স্থায়ী মহাকাশ স্টেশন। যেখান থেকে প্রয়োজনে চাঁদে নামতে পারবেন নভোচারীরা। এছাড়াও পৃথিবীর কক্ষপথে আলাদাভাবে একটি মহাকাশ স্টেশন ইতোমধ্যেই বানিয়ে ফেলেছে বেইজিং।
এই বছরে ‘কৃত্রিম সূর্য’ও বানিয়েছে চীন। এক লক্ষ কোটি ডলারের প্রকল্পে চীন এমন একটি নিউক্লিয়ার ফিউশন রিয়্যাক্টর বানিয়েছে যেখানে সূর্যের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি তাপমাত্রার জন্ম দেওয়া সম্ভব হয়েছে টানা ১৭ মিনিটের জন্য। সেই রিয়্যাক্টরে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে ১৫ কোটি ৮০ লক্ষ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা সাত কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।