ইসলামে পোষাক ও রঙের বিষয়ে কিছু বিধিনিষেধ আছে। পোশাক জাফরান, উসফুর ও ওরস রঙের হতে পারবে না। উসফুর এক ধরনের হলুদ রঙের ফুল, যা পানিতে মিশ্রিত করে কাপড় রঙিন করা হয়। আরবে এর প্রচলন ছিল। ওরসও একটি ফুলের নাম, যা কাপড় রঙিন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। নিম্নে তা বর্ননা করা হলো-
এক. পোশাকটি সতর আবৃতকারী হতে হবে। সতর আবৃতকারী পোশাক বলতে বোঝায়, যে পোশাক সতরের অঙ্গগুলোকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। কাপড় এমন মসৃণ ও পাতলা হতে পারবে না যে এতে পোশাকের অভ্যন্তর অঙ্গই দেখা যায়। কাপড় ঢিলেঢালা হওয়া উচিত। শর্টকাট, আঁটসাঁট পোশাক বিবস্ত্রতার নামান্তর।
দুই. পোশাক শালীনতা, সৌজন্যতা ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হওয়া চাই। জুতসই, মানানসই পোশাক পরিধানই ইসলামের দাবি। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৯১)
এক সাহাবি মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, আমার শখ হলো, আমার কাপড় উন্নতমানের হোক, আমার জুতা জোড়া অভিজাত হোক—এটা কি অহংকারপ্রসূত? রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ সৌন্দর্য পছন্দ করেন (সৌন্দর্যের প্রকাশ অহংকার নয়)। ওই ব্যক্তি অহংকারী, যে সত্যের সামনে ঔদ্ধত্য দেখায় আর মানুষদের তুচ্ছজ্ঞান করে, অবজ্ঞা করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪৭)
তিন. পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে অন্যের সাদৃশ্য বর্জন করা। তিনটি বিষয়ে সাদৃশ্য অবলম্বনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ১. কাফির-মুশরিকদের পোশাক গ্রহণ করা যাবে না। ২. ফাসেক-পাপাচারীদের মতো পোশাক পরিধান করা যাবে না। ৩. বিপরীত লিঙ্গের মতো পোশাক ধারণ করা যাবে না। অর্থাৎ পুরুষের জন্য নারীদের ন্যায় আর নারীদের জন্য পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা জায়েজ নয়।
চার. রেশমি কাপড় পরিধান করা যাবে না। এটি পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য। নারীদের জন্য রেশমি কাপড় পরিধান করা বৈধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : ‘আমার উম্মতের মধ্যে পুরুষদের জন্য রেশমি কাপড় এবং স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম; কিন্তু নারীদের জন্য তা হালাল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৭২০)
পাঁচ. পোশাকটি লাল রঙের হতে পারবে না। এটিও পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য। কেননা তাদের জন্য গাঢ় লাল রঙের পোশাক পরিধান করা মাকরুহ। তবে হালকা লাল রঙের পোশাক পরিধান করা বৈধ। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৫৮, কাশফুল বারি : কিতাবুল লেবাস : ২০৯)
ছয়. পোশাক জাফরান, উসফুর ও ওরস রঙের হতে পারবে না। উসফুর এক ধরনের হলুদ রঙের ফুল, যা পানিতে মিশ্রিত করে কাপড় রঙিন করা হয়। আরবে এর প্রচলন ছিল। ওরসও একটি ফুলের নাম, যা কাপড় রঙিন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে এমন পোশাক পরিধানের নিষেধাজ্ঞাও কেবল পুরুষদের জন্য।
সাত. বিলাসিতা পরিহার করতে হবে। সীমাতিরিক্ত বিলাসিতার গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেওয়া কাফিরদের অভ্যাস। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন : ‘বিলাসিতা পরিহার করো। আল্লাহর নেক বান্দারা বিলাসী জীবনযাপন করে না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২১০৫)
আট. পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে অপচয় ও অহংকার থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এ বিষয়ে উদাসীনতা কাম্য নয়। কোরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! যখন তোমরা মসজিদে আসবে, তখন নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশক বস্তু (পোশাক) নিয়ে এসো। আর অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩১)
নয়. অপচয় যেমন নিন্দনীয়, কৃপণতাও অনুরূপ নিন্দনীয়, বর্জনীয়। তাই নিজের ব্যক্তিত্ব ও সামর্থ্য অনুসারে পোশাক পরিধান করা উচিত। এ বিষয়ে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ বান্দাকে যে নিয়ামত দিয়ে সিক্ত করেছেন, তার প্রভাব-প্রতিরূপ তিনি বান্দার মধ্যে দেখতে ভালোবাসেন।’
এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে নিম্নমানের পোশাক পরে উপস্থিত হন। এটা দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমার কি অর্থকড়ি, সহায়-সম্পত্তি নেই? সাহাবি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে আল্লাহ অঢেল সম্পত্তি দান করেছেন। শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ তোমার শরীরে দৃশ্যমান হওয়া উচিত।’ (তাবারানি কাবির : ১৯/৯৭৯)
দশ. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা উচিত। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি ইসলাম সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। সাফসুতরা, পরিপাটি ও সুন্দরভাবে জীবনযাপন ইসলামের শিক্ষা। বিশেষত, পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধানের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। এক ব্যক্তির মাথায় অগোছালো ও এলোকেশ দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এই ব্যক্তি কি কোনো কিছু (তেল ইত্যাদি) খুঁজে পায় না, যা তার চুলগুলোকে জমিয়ে রাখে, গুছিয়ে রাখতে সহযোগিতা করে?’
ময়লাযুক্ত কাপড় পরিহিত অন্য একজনকে দেখে তিনি বলেছেন, ‘তার কি কিছু নেই, যা দিয়ে সে নিজের কাপড়চোপড় ধুয়ে নিতে পারে?’ সুতরাং পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা উচিত। মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।