মানুষ বাকশক্তিসম্পন্ন প্রাণী। মানুষকে কথা বলতেই হবে। এই কথা হতে পারে কোনো নর কিংবা নারীর সঙ্গে। প্রয়োজনে নারীর সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেয় ইসলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে বহু নারী তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। অনেক নারী সাহাবিয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে মাসআলা জিজ্ঞাসা করতেন। তিনি সেগুলোর ব্যাপারে ফতোয়া দিতেন। তাই এমন কাজে কোনো অসুবিধা নেই। তবে শর্তসাপেক্ষে ইসলাম নারীদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দিয়েছে।
নারীদের সঙ্গে কথা বলার মূলনীতি বিষয়ে পবিত্র কোরআনে দুটি আয়াত নাজিল হয়েছে। এক. মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী-পত্নীরা, তোমরা অন্য নারীদের মতো নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো তাহলে পর-পুরুষের সঙ্গে এমনভাবে কথা বোলো না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩২)
দুই. অন্য আয়াতে এসেছে, ‘…তোমরা তাঁর পত্নীদের কাছ থেকে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৩)
এই দুটি আয়াত ও বিভিন্ন হাদিসের আলোকে ইসলামিক স্কলাররা নারীদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত আরোপ করেছেন। সেগুলো হলো—১. নির্জনে পর-নারীর সঙ্গে কথা বলবে না। ২. কথা বলার ক্ষেত্রে বৈধতার সীমারেখা অতিক্রম করবে না। ৩. অশ্লীল বা উত্তেজক কোনো কথা বলবে না। ৪. মোহগ্রস্ত করার লক্ষ্যে নরম স্বরে কথা বলবে না। ৫. নারী পূর্ণ পর্দার ভেতর থেকে কথা বলবে। ৬. প্রয়োজন-অতিরিক্ত কথা বলবে না। ৭. কাউকে আহত করে কোনো কথা বলবে না। ৮. ন্যায়সংগত ও উত্তম কথা বলবে।
যেকোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া জরুরি। কেননা মানুষের প্রতিটি কথা রেকর্ড হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে যে কথাই উচ্চারণ করে তার কাছে সদা সংরক্ষণকারী উপস্থিত আছে।’ (সুরা কাফ, আয়াত : ১৮)
কণ্ঠস্বর নিচু করে কথা বলা ইসলামী শিষ্টাচার। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তুমি তোমার কণ্ঠস্বর নিচু করো; নিশ্চয়ই কণ্ঠস্বরের মধ্যে গর্দভের সুরই সবচেয়ে অপ্রীতিকর।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৯)।
যেকোনো মানুষের সঙ্গে সুন্দরভাবে ও উত্তমরূপে কথা বলা ইসলামের শিক্ষা। ইরশাদ হয়েছে, ‘…তোমরা মানুষের সঙ্গে সদালাপ করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮৩)
কাউকে কটাক্ষ করা, উপহাস করা, কারো দিকে কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত করা এবং মন্দ বিশেষণে কাউকে ভূষিত করা ইসলামে খুবই গর্হিত অপরাধ। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, কোনো পুরুষ যেন অন্য কোনো পুরুষকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করার হয়, সে উপহাসকারীর চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর কোনো নারী যেন অন্য কোনো নারীকে উপহাস না করে। কেননা যাকে উপহাস করা হয়, সে উপহাসকারিণীর চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ কোরো না এবং একে কাউকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা অতি নিন্দনীয়। যারা তাওবা করে না তারাই জালিম।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১১)