আবু বারজাহ আল আসলামি নাজলাহ বিন উবাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দা (চারটি) প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত দুই পা সরাতে পারবে না। এক. কোন কাজে জীবন ব্যয় করেছে, দুই. ইলম অনুসারে কেমন আমল করেছে, তিন. কোন খাত থেকে সম্পদ উপার্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে, চার. নিজ দেহ কোথায় ব্যস্ত রেখেছে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৭)
উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন চারটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন, যার উত্তর দেওয়া ছাড়া কেউ পরকালে মুক্তি পাবে না। আর এই চারটি বিষয়ে উত্তর দেওয়া মানুষের জন্য তখনই সহজ হবে, যখন পৃথিবীতে সে এসব বিষয়ে সচেতন থাকবে।
ইসলাম মানুষকে সব সময় আত্মজিজ্ঞাসা করার নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষ নিজের হিসাব নিজে করবে। ফলে আল্লাহর নির্দেশনা মতে চলা সহজ হবে এবং কিয়ামতের দিন তার জিজ্ঞাসাও সহজ হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেকে যেন ভাবে আগামীর জন্য সে কী পাঠিয়েছে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১৮)
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘তোমাদের হিসাব গ্রহণের আগে তোমরা নিজেদের হিসাব নাও। পরকালের জন্য তোমরা কী কী প্রস্তুত করেছ, মহান রবের কাছে উপস্থাপনের জন্য কী কী ভালো কাজ করেছ, তোমরা তা যাচাই-বাছাই করো।’
আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মহান আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালন করা যায়। পবিত্রতা সাফল্যের অন্যতম সোপান হিসেবে অভিহিত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সে-ই সফল হবে, যে নিজের অন্তর পরিশুদ্ধ করেছে। আর সে-ই ব্যর্থ, যে নিজের অন্তরকে কলুষিত করেছে।’ (সুরা : শামস, আয়াত : ৯-১০)
ইহকালে নিজের হিসাব নেওয়াকে বিজ্ঞতার পরিচায়ক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। শাদ্দাদ বিন আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি বুদ্ধিমান, যে ব্যক্তি নিজের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুপরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে। ওই ব্যক্তি ব্যর্থ, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং আল্লাহর কাছে আশা করে বসে থাকে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)
আখিরাতে চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির জন্য দুনিয়ায় নিজের হিসাব নেওয়া জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি মহান রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই তার আবাস হবে।’ (সুরা : নাজিআত, আয়াত : ৪০-৪১)
ওমর (রা.) বলেছেন, তোমাদের হিসাব নেওয়ার আগেই তোমরা নিজেদের কাজের হিসাব নাও। তোমাদের পরিমাপের আগে তোমরা নিজেদের পরিমাপ করো। তাহলে আগামীকাল তোমাদের জন্য হিসাব দেওয়া সহজ হবে। আর কিয়ামতের দিন মহাসমাগমের জন্য তোমরা নিজেদের প্রস্তুত করো। আল্লাহ বলেছেন, ‘সেদিন তোমাদের উপস্থিত করা হবে, তোমাদের কোনো কিছুই আর গোপন থাকবে না। তখন যাকে আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে সে বলবে, আমার আমলনামা নাও, পড়ে দেখো। আমি জানতাম, আমাকে হিসাবের মুখোমুখি হতে হবে। অতঃপর সে সন্তুষ্টিদায়ক জীবন যাপন করবে।’ (সুরা : হাক্কাহ, আয়াত : ১৮; আজ-জুহদ, পৃষ্ঠা : ১২০)
হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, মুমিন নিজের বিষয়ে দায়িত্বশীল। সে মহান আল্লাহর ভয়ে নিজের হিসাব নেবে। যারা দুনিয়ায় নিজের হিসাব নেবে, কিয়ামতের দিন তাদের হিসাব সহজ হবে। আর যারা নিজের হিসাব ছাড়াই পরকালে আসবে, তাদের জন্য তা কঠিন হবে। (হিলয়াতুল আউলিয়া, পৃষ্ঠা : ৫২)
পার্থিব জীবনে লোভ-লালসা ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে বিশেষ অনুগ্রহ প্রত্যাশা করতে হবে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি (ইউসুফ) বললেন, আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না, মানুষের অন্তর মন্দ কর্মপ্রবণ, তবে আমার রব যাকে অনুগ্রহ করেন, নিশ্চয়ই আমার রব ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৫৩)