আজ কালের মধ্যেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আঘাত হানতে যাচ্ছে জিওম্যাগনেটিক বা ভূচৌম্বকীয় ঝড়। যাকে বিজ্ঞানীরা সৌরঝড় বলছেন। এ সতর্কবার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। গত বৃহস্পতিবার সূর্য থেকে কয়েক মিলিয়ন টন আয়নযুক্ত গ্যাস নির্গত হওয়ার পর এমন ধারণা করা হয়। তবে, এ ঝড়ের কারণে মানুষের শারীরিক কোন ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞানীদের মতে ভূচৌম্বকীয় ঝড় হলো, সূর্য এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে তীব্র সৌরশক্তির বিনিময় বলা চলে, তবে সেটা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সর্বশেষ স্তর ম্যাগনেটোস্ফিয়ারে বড় বাধা তৈরি করে। এতে বেতার তরঙ্গের সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়।
নাসা বলছে, সৌরঝড় আঘাত হানার ফলে সূর্য থেকে নির্গত হবে লাখ লাখ টন গ্যাস। এর ফলে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে পৃথিবীর জিপিএস সিগনাল, স্যাটেলাইট ব্যবস্থা ও বৈদ্যুতিক গ্রিডগুলো। পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চলে নর্দার্ন অরোরাগুলোও স্পষ্ট হয়ে উঠবে এই সৌরঝড়ের কারণে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে পৃথিবীর ইন্টারনেট ব্যবস্থাও।
সংস্থাটি আরো জানায়, সৌরঝড়ের কারণে কিছুক্ষণের জন্য হলেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ মেরু, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং উত্তর মেরুর যাবতীয় রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থা।
সূর্য থেকে শক্তিশালী তেজস্ক্রিয় বিকিরণকে সোলার ফ্লেয়ার বা সৌরশিখা বলা হয়। বৃহস্পতিবার ‘এক্স১’ শ্রেণির এমন শিখা নির্গত হয়েছে বলে ধরা পড়ে নাসার সোলার ডাইনামিকস অবজারভেটরিতে। সবচেয়ে তীব্র সৌরশিখার ক্ষেত্রে ‘এক্স’ শ্রেণির উল্লেখ করে থাকে নাসা। সঙ্গে থাকা নম্বরটি বোঝায় তীব্রতা। যেমন এক্স১-এর চেয়ে এক্স২ ও এক্স৩ যথাক্রমে দ্বিগুণ ও তিন গুণ শক্তির।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টারের (এসডব্লিউপিসি) বিশ্লেষণে দেখা যায়, সূর্য থেকে সৌরশিখা নির্গত হয় সেকেন্ডে ৯৭৩ কিলোমিটার বেগে।
স্পেসওয়েদার ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের সৌরশিখার উৎপত্তি ‘এআর২৮৮৭’ নামের সৌরকলঙ্ক থেকে, যেটি বর্তমানে সূর্যের মাঝামাঝি এবং পৃথিবীর দিকে মুখ করে আছে। সূর্যের পৃষ্ঠের দাগ হলো সৌরকলঙ্ক।
সৌরশিখার ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় কণা পৃথিবীর পরিমণ্ডল ভেদ করে মানুষের ক্ষতি করতে পারে না। তবে বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে জিপিএস এবং যোগাযোগের তরঙ্গ প্রবাহিত হয়, আঘাত করে সেখানে।
তীব্র এই সৌরশিখা সরাসরি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে এলে সঙ্গে আসতে পারে সৌরকণা, যা ‘করোনাল মাস ইজেকশন’ হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বৃহস্পতিবারের এক্স১ শ্রেণির সৌরশিখার সঙ্গে করোনাল মাস ইজেকশনের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। তবে এসডব্লিউপিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এবারের সৌরঝড়ের প্রভাব ন্যূনতম হওয়ার কথা।