মোমিন শব্দের আভিধানিক অর্থ স্বীকার করা, স্বীকৃতি দেওয়া, বিশ্বাস করা। পরিভাষায় মোমিন বলা হয় ওই ব্যক্তিকে যে আল্লাহর একাত্মবাদে পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলে; আর সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে। একটু অন্যভাবে বললে যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রেরিত সব নবী, রসুল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, পরকাল ও তাকদিরের ওপর পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপন করে; এমনকি ইমান গ্রহণের পর যে ব্যক্তি ইমান থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হয়নি সে-ই প্রকৃত মোমিন।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ মোমিনদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেন, ‘যারা মোমিন, আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরে প্রশান্তি এসে থাকে। জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণ আসলে সেই জিনিস যার দ্বারা দিল পরম শান্তি ও স্বস্তি লাভ করে।’ সুরা রাদ, আয়াত ২৮। শুধু ইমান আনলেই মোমিন হওয়া যাবে না। বরং সত্যিকারের মোমিন হতে হলে তা-ই করতে হবে যা করতে আল্লাহ আদেশ করেছেন। বেঁচে থাকতে তা থেকে যা করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা ইমান এনেছে, হিজরত করেছে, আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যারা আশ্রয় দান করেছে ও সাহায্য করেছে তারাই প্রকৃত মোমিন, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিজিক।’ সুরা আনফাল, আয়াত ৭৪। মোমিনদের স্বভাব কেমন হবে সে সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘যখন মোমিনদের মধ্যে ফয়সালার জন্য আল্লাহ ও রসুলের (বিধান) ডাকা হয় তখন তারা বলে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। আর এরূপ লোকই প্রকৃত সফলকাম।’ সুরা নুর, আয়াত ৫১।
হাদিসেও মোমিনদের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা এসেছে। মোমিনদের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা মোমিনদের পারস্পরিক দয়া, ভালোবাসা ও হৃদ্যতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে একটি দেহের মতো দেখতে পাবে। দেহের কোনো অঙ্গ যদি পীড়িত হয়ে পড়ে তাহলে অন্য অঙ্গগুলোও জ্বর, নিদ্রাহীনতাসহ তার ডাকে সাড়া দেয়।’ বুখারি। মোমিনরা নরম হৃদয়ের হবে। সহজেই তাদের অন্তর কেঁপে উঠবে।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর স্মরণে তাদের দিল কেঁপে ওঠে, তাদের সামনে আল্লাহর বাণী উচ্চারিত হলে তাদের ইমান বৃদ্ধি পায়, তারা আল্লাহর ওপর আস্থাশীল ও নির্ভরশীল হয়, নামাজ কায়েম করে এবং আল্লাহ-প্রদত্ত রিজিক থেকে ব্যয় করে। প্রকৃতপক্ষে এরাই হচ্ছে সত্যিকারের মোমিন। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে উচ্চমর্যাদা রয়েছে, আরও রয়েছে অপরাধের ক্ষমা ও অতি উত্তম রিজিক।’ সুরা আনফাল, আয়াত ২-৪।
কোরআনে আল্লাহ মোমিনদের নিয়ে একটি সুরা অবতীর্ণ করেছেন যেখানে বলে দিয়েছেন সফল মোমিন কারা। তাদের মধ্যে কী কী বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওইসব মোমিনই সফলকাম হয়েছে যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-নম্র, যারা অনর্থক কথাবার্তায় নির্লিপ্ত ও বিতৃষ্ণ, যারা জাকাতদানে তৎপর, যারা নিজেদের যৌনাঙ্গ সংযত রাখে, তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না, তারপর কেউ এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী হবে এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকে এবং যারা তাদের নামাজসমূহের হেফাজত করে, তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে, তারা ছায়াময় সুশীতল উদ্যানের উত্তরাধিকার লাভ করবে, তারা তাতে চিরকাল থাকবে।’ সুরা মোমিনুন, আয়াত ১-১১।
লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।