সব নবী যে ছয় বিষয়ের দাওয়াত দিয়েছেন

পৃথিবীর শুরু থেকেই আল্লাহ মানবজাতিকে দ্বিনের দিশা দিয়েছেন। এ জন্য তিনি প্রথম মানব আদম (আ.)-কে নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আদম (আ.) থেকে শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সব নবী-রাসুলই মৌলিকভাবে অভিন্ন দ্বিনের দাওয়াত দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘সব মানুষ একই দ্বিনের অনুসারী ছিল। তারপর আল্লাহ নবী পাঠালেন। যারা সুসংবাদ শোনাত এবং ভীতি প্রদর্শন করত। আর তাঁদের সঙ্গে সত্যসংবলিত কিতাব অবতীর্ণ করলেন। যাতে তাঁরা মানুষের মধ্যকার মতভেদপূর্ণ বিষয়ে মীমাংসা করে দেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৩)

নবীরা যে ছয় বিষয়ের দাওয়াত দিয়েছেন : নবী-রাসুল (আ.) যেসব বিষয়ের দাওয়াত দিয়েছেন তাকে ছয় ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো —

১. আকিদা-বিশ্বাস : যুগে যুগে নবীরা যেসব বিষয়ের দাওয়াত দিয়েছেন তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিশুদ্ধ আকিদা ও বিশ্বাস। কেননা আকিদার মাধ্যমে মানুষ তার ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সঠিক কর্মপন্থা অবলম্বন করতে সক্ষম হয়। সব নবী মৌলিকভাবে তিনটি বিষয়ের ওপর ঈমান আনার আহ্বান জানিয়েছেন। তা হলো—এক. আল্লাহর একত্ববাদ, দুই. তাদের নবুয়ত ও রিসালাত, তিন. পরকালের শাস্তি ও পুরস্কার। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনার আগে যে রাসুলই প্রেরণ করেছি, তাঁর প্রতি অবশ্যই এ ওহি পাঠিয়েছি যে আমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। অতএব, আমার ইবাদত কোরো। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ২৫)

২. ইবাদত : আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও দ্বিনের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের পর মুমিনের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হলো আল্লাহর ইবাদত করা। পৃথিবীর সব নবী-রাসুল মানুষকে আল্লাহর ইবাদত করার আহ্বান জানিয়েছেন। কেননা এটাই মানব সৃষ্টির প্রধান লক্ষ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে এ জন্যই সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা আমার ইবাদত করে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)

অন্য আয়াতে ঈসা (আ.) জবানিতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমাকে আল্লাহ নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন, যত দিন আমি জীবিত থাকি।’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ৩১)

৩. মুআমালাত : ইবাদতের পর মুআমালাত বা পারস্পরিক লেনদেন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা এর সঙ্গে মানুষের অধিকার জড়িত। নবী-রাসুলরা মানুষকে লেনদেনে সৎ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। শোআইব (আ.) তাঁর জাতিকে বলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে পরিমাপ ও ওজন কোরো, মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ো না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িয়ো না।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৮৫)

৪. মুআশারা : মুআশারা হলো সামাজিক আচরণ ও অধিকার। একটি আদর্শ ও সুন্দর সমাজ গঠনে সামাজিক সচ্চরিত্র ও মানবিক আচরণ করা আবশ্যক। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা বেশির ভাগ অনুমান থেকে দূরে থাকো; কেননা অনুমাণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান কোরো না এবং পরস্পরের অনুপস্থিতিতে নিন্দা কোরো না।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১২)

৫. সিয়াসাত : মানবসমাজের প্রয়োজনেই প্রাচীনকাল থেকে রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় কাঠামো ত্রুটিপূর্ণ না হলে কোনো সমাজের পূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। তাই নবী-রাসুলরা আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আমার রাসুলদের প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ২৫)

কোরআনের বর্ণনা মতে, দাউদ (আ.), সুলাইমান (আ.), ইউসুফ (আ.)-সহ বহু নবীকে আল্লাহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। মহানবী (সা.)-ও মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

৬. আখলাক : আখলাক হলো উত্তম চরিত্র, স্বভাব ও আচরণ। পৃথিবীর সব নবী ও রাসুল ছিলেন উত্তম আদর্শের অধিকারী। তারা মানুষকে উত্তম চরিত্র শিক্ষা দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে উত্তম চরিত্রের পূর্ণাঙ্গতা প্রদানের জন্য।’ (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ২৬৩৩)

মৌলিকভাবে এই ছয়টি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে মানুষের ইহকালীন সাফল্য ও পরকালীন মুক্তি। আল্লাহ তাআলা সবাইকে নবী-রাসুল (আ.)-এর শিক্ষা অনুসরণের তাওফিক দান করুন। আমিন।