ছেলের প্রাণ বাঁচাতে কিডনি দিলেন মমতাময়ী মা

‘মা’ একটি ছোট্ট শব্দ। এই শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সব মায়া, মমতা, অকৃত্রিম স্নেহ, আদর, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সব সুখের কথা। চাওয়া-পাওয়ার এই পৃথিবীতে বাবা-মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না।

নতুন খবর হচ্ছে, ফেনীর দাগনভূইয়া ছেলের প্রাণ বাঁচাতে কিডনি দান করলেন ছালেহা বেগম নামের এক মা। উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়নের দরাপপুর গ্রামের মমতাজ মিয়ার বাড়ির মৃ;ত মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে গোলাম আজম (৩১) চট্টগ্রামে আবুল খায়ের কোম্পানিতে প্রশাসন বিভাগে চাকরি করেন।

গত বছর ডিসেম্বর মাসে অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, গোলাম আজমের দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে।

তার চিকিৎসা করতে গিয়ে সহায়-সম্পদ বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়ে পরিবারটি।ভুক্তভোগীর মামা সেনবাগ উপজেলার কাজিরখিল গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, তার ভাগ্নে গোলাম আজমের জন্য কিডনি কিনতে হলে প্রচুর টাকার প্রয়োজন।

দরিদ্র পরিবারটির পক্ষে কিডনি কেনা সম্ভব নয় বলে আজমের মা ছেলেকে নিজের কিডনি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি বিভাগে যোগাযোগ করেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, অসুস্থ গোলাম আজম অত্যন্ত মেধাবী। তার দুটি কিডনি অকেজো। কেউ কিডনি দিতে রাজি হয়নি।

পরিবারের পক্ষে কিডনি কেনা সম্ভব না হওয়ায় মা ছালেহা বেগম কিডনি দান করছেন। আজমের বাবা ট্রাক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত বছর তিনি মারা যান। তিন কন্যা ও এক ছেলে নিয়ে সুখের সংসার ছিল ছালেহার। একমাত্র ছেলের অসুস্থতায় পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার।

উপার্জনক্ষম ছেলের অসুস্থতার কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন ছালেহা বেগম। তিনি জানান, তার তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়েটি চট্টগ্রামে মাস্টার্স শেষ পর্বের শিক্ষার্থী।

তাকেও বিয়ে দিতে হবে। একদিকে ছেলের চিকিৎসা, অন্যদিকে মেয়ের বিয়ে নিয়ে দিশেহারা তিনি। ছেলের বাকি চিকিৎসা কীভাবে করবেন এমন দুশ্চিন্তায় তার প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে। সমাজের বিত্তশালী লোকজন যদি সহযোগিতার হাত বাড়ান তাহলে ছেলের ভবিষ্যৎ চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটির দাগনভূঞার সভাপতি এডভোকেট মিজানুর রহমান সেলিম জানান, ছেলের প্রাণ বাঁচাতে একজন মায়ের কিডনি দানের ঘটনা এ উপজেলায় প্রথম।