ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্রায় এক মাস আগে বাঁধ ভাঙায় সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগরে প্রতিদিনই ঢুকছে জোয়ারের পানি। যেন নদীর মধ্যে বসবাস করছে এ এলাকার মানুষ। চারদিকে পানি আর পানি। কোথাও কোনও শুকনো জায়গা নেই।
সেজন্য বাধ্য হয়ে শুক্রবার (২৫ জুন) আবারও কোম’র পানিতে দাঁড়িয়ে জুমা’র নামাজ আদায় করেছেন প্রতাপনগরের মু’সল্লিরা। এদিকে পূজা-অর্চনাও করতে পারছেন না হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিবাসীরা।
প্রতাপনগরের মোতোয়াল্লি গাজী বাড়ি জামে ম’সজিদের ই’মাম হাফেজ বাবুল হোসেন বলেন, আম’রা যে কী’ অবস্থার মধ্যে আছি, কেউ না দেখলে বিশ্বা’স করবে না। চারদিকে পানি আর পানি।
কেউ মা’রা গেলে কবর দেওয়ার জায়গা পর্যন্ত নেই। কোম’র পানিতে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে বাধ্য হচ্ছি। এ সপ্তাহের জুমা’র নামাজও পানির মধ্যে পড়তে হয়েছে।
তিনি বলেন, নদী আর জনপদ মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। খোলপেটুয়া নদীর লবণাক্ত পানি বয়ে চলেছে প্রতাপনগরের জনপদে। এক কথায় পানিতে ভাসছে প্রতাপনগর।
এলাকার বাসিন্দা মিলন বিশ্বা’স বলেন, ইয়াসের একমাস হলো। সবাই শুধু এসে দেখে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে কিছু দেখি না। এই ইউনিয়নে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষের বসবাস।
অধিকাংশ মানুষ পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। মাইলের পর মাইল রাস্তা, হাজার হাজার বিঘার মৎস্য ঘের, সবুজ শ্যামল, ফসল ভরা ক্ষেত খামা’র, প্রকৃতির পরিবেশ, ব্যবসায়ীদের দোকানপাট সবই নদীর লবণ জলে জলাঞ্জলি হলো।
বাদ যায়নি ধ’র্মীয় উপাসনালয় ম’সজিদ, মন্দির, স্কুল মাদ্রাসা’সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়া মানুষের খবর নিচ্ছে না কেউ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তা’ণ্ডবে উপকূলীয় প্রতাপনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন বেড়িবাঁধ ভাঙায় প্রায় ১০ মাস কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ার-ভাটার লোনাপানির স্রোত বয়ে গেছে।
বাঁধ ঠিক করার দুই’মাস পর আবারও গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রতাপনগরের ঝুঁ’কিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে আজও খোলপেটুয়া নদীর লবণাক্ত পানির জোয়ার ভাটার স্রোত বয়ে যাচ্ছে। গত বছরের ক্ষত না শুকাতেই আবারও বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হওয়া মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
ইতোমধ্যে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার এলাকা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমিয়েছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।