বৈশ্বিক মৃত্যুর পেছনে যে কারণগুলো সবথেকে বেশি দায়ি তারমধ্যে প্রথম দিকেই রয়েছে বায়ু দুষণ। প্রতি বছর প্রায় ৭ কোটি মানুষের মৃত্যু হয় বায়ু দুষণের কারণে। তবে গত দেড় বছর ধরে বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড মহামারি। এ সময় মানুষ বাধ্য হয়েছে স্বাভাবিক কাজকর্ম থেকে নিজেকে দূরে রাখতে।
ফলে বিশ্বজুড়ে উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে বায়ু দুষণ। একইসঙ্গে এই মহামারি আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে যে, চাইলেই কতো কম সময়ে আমরা পৃথিবীর বাতাস পরিস্কার করতে পারি। যে বায়ু দুষণ বিশ্বের সবথেকে বড় সমস্যাগুলোর একটি, সেটি শুধুমাত্র ভ্রমণ কমিয়ে দিয়েই মোকাবেলা করা সম্ভব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বের প্রতি ১০ জনের ৯ জনই ক্ষতিকর মাত্রায় দুষিত বায়ু গ্রহণ করে। তবে মহামারি শুরু হওয়ার বায়ু দূষণের হার একেবারেই কমে এসেছে। বিবিসির খবরে জানানো হয়েছে, কার্বন নিঃসরণ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র এক চতুর্থাংশে। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার হিসেবে, ২০১৯ সালের তুলনায় ভ্রমণ কমেছে ৫০ শতাংশের বেশি। ফলে বিশ্বজুড়ে বাতাসের মানে যে উন্নতি হয়েছে তা এখন স্পষ্ট। শহুরে অঞ্চলগুলোতে কারখানা বন্ধ থাকায় বাতাসে ক্ষতিকর উপাদান ছড়ানো কমেছে।
বৃটেনের ন্যাশনাল এটোমোস্ফিয়ারিক সায়েন্স সেন্টার তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে দেশটির ১০ শহরে বড় মাত্রায় নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ কমে এসেছে। ভারতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই দেশটির পরিস্কার আকাশের ছবি পোস্ট করছেন। মহামারির আগেও যে দেশটিতে বায়ু দুষণ বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছিল সেখানে এখন একদম ঝকঝকে আকাশ দেখা যাচ্ছে।
এ নিয়ে এনার্জি এন্ড ক্লিন এয়ার রিসার্চ সেন্টারের সুনীল দাহিয়া বিবিসিকে বলেন, মহামারি আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে যে, কতো দ্রুত আমরা পরিস্কার আকাশ ও শ্বাস নেয়ার মতো উপযুক্ত বাতাস নিশ্চিত করতে পারি। শুধুমাত্র কিছু পদক্ষেপই এই অর্জনের জন্য যথেষ্ট। যদিও লকডাউন সরে গেলে আবারো দ্রুতই মানুষ বাতাস দুষিত করে ফেলতে পারে এমন নজিরও দেখা যাচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড মেটেওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) জানিয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণও কমে এসেছে। লকডাউনের কারণে যখন যোগাযোগ ও কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলো তখন নাটকীয়ভাবে এই গ্যাস কমে আসতে শুরু করে। যদিও ডব্লিউএমও জানিয়েছে, দেরিতে হলেও এর উৎপাদন আবারো বাড়তে শুরু করেছে। ফলে বায়ুমণ্ডলে এই গ্যাসের ঘনত্ব রাতারাতি কমে আসার সম্ভাবনা নেই।