নওমুসলিমের কথা : নারীর সামনে মুসলিম পুরুষের অবনত দৃষ্টি আমাকে মুগ্ধ করেছিল

১৪ বছর বয়সে যখন আমি প্রথমবারের মতো মিসরে যাই, তখনো আমি জানতাম না কয়েক বছর পর একই রোড, পিরামিডের সিঁড়িতে হাঁটব। তবে একজন পর্যটক হিসেবে নয়; বরং একজন গর্বিত মুসলিম হিসেবে। যে আল্লাহর সন্ধানে তাঁর ঘর ছেড়েছে। আমার ও আমার পরিবারের প্রতি মিসরীয়দের আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা আমাকে প্রথম থেকেই মুগ্ধ করেছিল।

তখন শুধু সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ হিসেবেই ইসলাম আমাকে মুগ্ধ করেছিল। হাই স্কুল জীবনের শেষদিকে অন্যান্য কিশোর-কিশোরীর মতো বিশৃঙ্খল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠি। যতই বড় হচ্ছিলাম, ততই অবাধ স্বাধীনতায় নিমজ্জিত হচ্ছিলাম। তখন আমার পাশে এমন কেউ ছিল না যে আমাকে স্রষ্টার কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। কিছু বছর যাওয়ার পর যখন আমি ১৬ বছর অতিক্রম করেছি, তখন একটি সুখী কিশোর জীবনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন সব কিছু ছিল আমার।

অসংখ্য বন্ধু, প্রতি সপ্তাহ শেষে আড্ডা ইত্যাদি। কিন্তু আমি যেন কোনো কিছুর শূন্যতা অনুভব করতাম। মাঝেমধ্যে আমি আমার উদ্দেশ্যহীন জীবন নিয়ে ভাবতাম। আমরা এখানে শুধু আনন্দ, কৌতুক, পরিশ্রম এবং দিনশেষে মৃত্যুর জন্য এসেছি! এটাই কী সব? এভাবেই দিন দিন আমি আমার বন্ধুদের থেকে বিমুখ হচ্ছিলাম এবং মহান স্রষ্টার সন্ধান শুরু করি।

স্বাভাবিকভাবে তখন আমি গির্জার প্রতি ঝুঁকতে শুরু করলাম। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে বুঝে গেলাম খ্রিস্টবাদে বহু আত্মবিরোধ এবং অভিযোগের জায়গা রয়েছে। মনে বিশ্বাস তৈরি হলো—নিশ্চয়ই মহান স্রষ্টা আমার জন্য আরো ভালো কিছু রেখেছেন।

নিজ শহর বুদাপেস্টের একটি এনজিওতে আমি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতাম। তারা আমাকে প্রস্তাব দিল ‘অ্যাডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ ইনভলবিং পিপল উইথ এ মুসলিম কালচারাল ব্যাকগ্রাউন্ড’ শীর্ষক সেমিনামের ‘থিম’ (মূল প্রবন্ধ) উপস্থাপনের। তথ্য সংগ্রহের জন্য তারা আমাকে মিসরে পাঠাল। সেমিনারটি মূলত ইসলাম ও মুসলিম জীবন সম্পর্কিত ছিল।

মিসরে এক সপ্তাহ অবস্থানের সময় যখন দেখি আমাকে হাঁটতে দেখে অনেকে তাদের দৃষ্টি অবনত করে ফেলছে, মিসরের ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান না করার পরও তারা আমার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছে, তখন অন্য রকম অনুভূতি হয়। অতীতের কথা মনে করে আমি লজ্জিত হলাম, যখন আমি পানশালায় যেতাম, নেশাগ্রস্ত হয়ে নাচ করতাম আর ছেলেরা অশালীন মন্তব্য করত।

মিসরীয় জীবন পর্যবেক্ষণ করে আমি নিশ্চিত হলাম ইসলাম শুধু আরব বা তুর্কিদের ধর্ম নয়; বরং এটা সব ধর্ম, বর্ণ ও ভাষাভাষী মানুষের জন্য উত্তম জীবনের দিশা। ফলে ইসলাম সম্পর্কে আরো জানতে শুরু করি। ইন্টারনেট ঘেঁটে জানতে পারলাম শুধু আমি নই; বরং হাঙ্গেরির বহু বিখ্যাতজন ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে আমি ই-মেইল বিনিময় করি।

তাঁরা আমাকে ইসলামবিষয়ক আলোচনা শুনতে নারীদের এক বৈঠকে আমন্ত্রণ করেন। তাঁরা আমাকে উষ্ণ আন্তরিকতায় গ্রহণ করেন এবং তাঁদের সঙ্গে আমি স্বস্তিকর সময় কাটাই। আলোচনা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এরপর আরো কয়েকটি বৈঠকে অংশগ্রহণ করি এবং প্রতিবারই আত্মিক শক্তি লাভ করেছি। তাঁদের কথায় প্রভাবিত হলেও আমি তখনো মুসলিম হইনি; বরং ইন্টারনেট ও ইউটিউবে ইসলাম সম্পর্কে আরো বেশি জানতে চেষ্টা করি।

আমি আমার জীবনের পরিবর্তন নিয়ে ভীত ছিলাম। পরিবার, বন্ধু, সহপাঠী ও শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা ভেবেও চিন্তিত ছিলাম। অবশ্য তারা আমার পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করছিল। তাদের প্রত্যাশা ছিল একসময় সব আগের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহে আমি ইতিবাচক পরিবর্তনটাই গ্রহণ করি এবং ৯ বছর আগে কলেমা পাঠ করে মুসলিম হই। আল হামদুলিল্লাহ!

সূত্র : কালের কণ্ঠ