ভাবছিলাম টাকা কয়ডা পাইলে ঈদ করতে পারমু। কিন্তু আমগো সেই আশা আর পূরণ হইলো না। শুক্রবার (৭ মে) কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমনটিই বলছিলেন শেরপুর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কসবা কাঠগড় মহল্লার বাসিন্দা মো. জুলহাস উদ্দিন ও আছমা বেগম দম্পতি।
আছমা বেগম জানান, তার মেয়ে ছাইমা (৮) একজন শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু। গত ৬ মে সমাজসেবা অধিদফতর থেকে আমার মেয়ের নামে বিকাশ অ্যাকাউন্টে ৪ হাজার ৫০০ টাকা আসার কথা ছিল। কিন্তু পরিচিত অনেকের অ্যাকাউন্টে টাকা এলেও আমরা কোন টাকা পাইনি। এরপর সমাজসেবা অফিসে গেলে তারা জানান, টাকা অন্য একটি ভুল বিকাশ নম্বরে চলে গেছে। এ কথা শোনার পর আমাদের মাথায় বাজ পড়েছে।
আছমা বেগম আরও জানান, এই টাকা কয়ডার জন্য কবে থাইকা অপেক্ষা করতাছি। ঈদের সামনে মাইয়াডারে কাপড় কিইনা দিমু, চিনি কিনমু, সেমাই কিনমু, একটু আকটু ভাল-মন্দ খামু। আমাদের সব আশা শেষ হয়ে গেছে। এবার আর ঈদে আনন্দ করতে পারমু না।
ছাইমার বাবা জুলহাস মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতরে আগের মতো শক্তি নেই, তাই কাজ করবার পাই না। আগে টুকটাক কৃষি কাজ করতাম, বাঁশের কাজ করতাম যা দিয়ে কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে সংসার চালাইতাম। অনেক দিন থেকে অসুস্থ। প্রতি মাসে মেয়েটার ওষুধের জন্য খরচ হয় ১ হাজার টাকা। এই টাকা পেলে ঈদের বাজার, কেজি খানেক গোশত, মেয়েটার কাপড় কিনে দিতাম। টাকাটা অন্য নম্বরে চলে গেছে। এখন আমাগো গরিবের সব আনন্দ শেষ।
জুলহাস মিয়া আরও বলেন, জেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে প্রতি ৬ মাস পর পর ব্যাংকে টাকা আসতো। তখন ব্যাংক থেকে টাকা তুলতাম। কিন্তু এবার করোনার কারণে ব্যাংকে ভিড় কমাতে প্রথমবারের মতো টাকা বিকাশে পাঠাচ্ছে। একটি ভুল নম্বর আমাদের সব আনন্দ কাইড়া নিল।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আজকের তারণ্যের জেলা সভাপতি রবিউল ইসলাম রতন বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই অসহায় পরিবারটির পাশে থাকার চেষ্টা করব।
এ ব্যাপারে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমরা সুবিধাভোগীদের টাকা বিকাশে দিচ্ছি। অক্ষর জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকে তাদের বিকাশ নম্বর সঠিকভাবে দিতে পারেন না। তবে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। আমরা বিকাশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যুক্তিবদ্ধ হয়ে এ রকম সমস্যা হলে টাকা ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ফিরিয়ে আনতে পারব। তবে বিষয়টি একটু সময় সাপেক্ষ।